পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধারের রাস্তা দিয়ে চলেছে, মেয়ের ধুচুনি ডুবিয়ে চাল খুচ্ছে, চাষার আঁটি-বাধা পাট মাথায় করে হাটে আসছে— দুটো লোক একটা গাছের গুড়ি মাটিতে ফেলে কুড়ল নিয়ে ঠক্ ঠক্ শব্দে কাঠ চেলা করছে, একটা ছুতোর অশথগাছের তলায় জেলেডিঙি উলটে ফেলে বাটারি হাতে মেরামত করছে, গ্রামের কুকুরটা খালের ধারে ধারে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, গুটিকতক গোরু বর্ষার ঘাস অপর্যাপ্ত পরিমাণে আহারপূর্বক অলসভাবে রৌদ্রে মাটির উপর পড়ে কান এবং লেজ নেড়ে মাছি তাড়াচ্ছে, এবং কাক এসে তাদের মেরুদণ্ডের উপর বসে যখন বড়ো বেশি বিরক্ত করছে তখন একবার পিঠের দিকে মাথাটা নেড়ে আপত্তি জানাচ্ছে। এখানকার এই দুই-একটা একঘেয়ে ঠকঠক্ ঠকঠাক শব্দ, উলঙ্গ ছেলেমেয়েদের খেলার কল্লোল, রাখালের করুণ উচ্চস্বরে গান, দাড়ের ঝুপ ঝাপ ধ্বনি, কলুর ঘানির তীক্ষকাতর নিখাদ স্বর, সমস্ত কর্মকোলাহল একত্র মিলে এই পাখির ডাক এবং পাতার শব্দের সঙ্গে কিছুমাত্র অসামঞ্জস্য ঘটাচ্ছে না— সমস্তটাই যেন একটা শান্তিময় স্বপ্নময় করুণা-মাখা একটা বড়ে সংগীতের অন্তর্গত— খুব বিস্তৃত বৃহৎ অথচ সংযত মাত্রায় বাধা । আমার মাথার মধ্যে সূর্যের আলোক এবং এই-সমস্ত শব্দ একেবারে যেন কানায় কানায় ভরে এসেছে, অতএব চিঠি বন্ধ করে খানিক ক্ষণ পড়ে থাকা যাক । ১৮২