পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ বেড়িয়ে বোটে ফিরে এসে দেখি, বাতির কাছে এত বেশি পতঙ্গের ভিড় হয়েছে যে টেবিলে বসা অসাধ্য। আজ তাই বাতি নিবিয়ে দিয়ে বাইরে কেদারা নিয়ে অন্ধকারে বসেছিলুম ; আকাশের সমস্ত জ্যোতির্জগৎ, অনন্ত রহস্তের অন্তঃপুরবাসিনী সমস্ত মেয়ের দলের মতো উপরের তলার খড়খড়ি থেকে আমাকে দেখছিল, আমি তাদের কিছুই জানি নে এবং কোনো কালে জানতে পাব কিনা তাও জানি নে— অথচ ঐ জ্যোতির্মণ্ডলীর মধ্যে বিচিত্র জীবনের অনন্ত ইতিহাস প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। আজ সন্ধের সময় আর চিঠি লেখা হয়ে ওঠে নি, তাই এখন লিখছি। এখন কত রাত হবে ? এগারোটা । যখন চিঠিটা পৌছবে তখন দিনের বেলাকার প্রখর অালোকে জগৎটা খুবই সজাগ চঞ্চল, নানান কাজে ব্যস্ত ; তখন কোথায় এই স্বযুপ্ত নিস্তব্ধ রাত্রি, কোথায় ঐ অনন্ত বিশ্বলোকের জ্যোতির্ময় শব্দহীন বার্তা । এত সুতীব্র প্রভেদ । কিছুতে ঠিক ভাবটি আনা যায় না । মানুষের মনের ক্ষমতা এত সামান্য । যে খুবই পরিচিত, চোখ বুজে তার আকৃতির প্রত্যেক রেখাটি মনে আনা যায় না— এক সময় যা সর্বপ্রধান আর-এক সময় তা যথার্থরূপে স্মৃতিগম্য করাও শক্ত হয়ে ওঠে। দিনের বেলায় রাতকে ভুলি, রাতের বেলায় দিনকে ভুলি। চাদের খণ্ড অনেক ক্ষণ হল উঠেছে ; চতুর্দিক একেবারে নিস্তব্ধ নিদ্রিত ; কেবল গ্রামের গোটাছুই কুকুর ও পার থেকে ডাকছে ; আমার এই বোটে কেবল একটি বাতি জ্বলছে, আর-সব জায়গায় আলো নিবেছে ; নদীতে একটু গতিমাত্র নেই, তাতেই মনে হয় মাছগুলো রাত্তিয়ে ঘুমোয়। জলের ধারে সুপ্ত গ্রাম এবং জলের উপর গ্রামের সুপ্ত ছায়া ! ૨૦ ૨