পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসর ২২ মার্চ ১৮৯৪ পশুপ্রীতি’ বলে ব— একটা প্রবন্ধ লিখে পাঠিয়েছে ; আজ সমস্ত সকালবেলায় সেইটে নিয়ে পড়েছিলুম। কাল আমি বোটে বসে জানলার বাইরে নদীর দিকে চেয়ে আছি এমন সময় হঠাৎ দেখি, একটা কী পাখি সাৎরে তাড়াতাড়ি ও পারের দিকে চলে যাচ্ছে আর তার পিছনে মহা ধর-ধর মার-মার রব উঠেছে। শেষকালে দেখি একটি মুরগি ; তার আসন্ন মৃত্যুকালে বাবুর্চিখানার নেীকো থেকে হঠাৎ কী রকমে ছাড়া পেয়ে জলে ঝাপিয়ে পড়ে পেরিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল ; ঠিক যেই তীরের কাছে গিয়ে পোঁচেছে অমনি যমদূত মানুষ র্ক্যাক করে তার গলা টিপে ধ’রে আবার নৌকো করে ফিরিয়ে নিয়ে এল। আমি ফটিককে ডেকে বললুম, আমার জন্যে আজ মাংস হবে না। এমন সময় ব—র পশুপ্রীতি লেখাটা এসে পৌছল— আমি পেয়ে কিছু আশ্চর্য হলুম। আমার তো আর মাংস খেতে রুচি হয় না। আমরা যে কী অন্যায় এবং নিষ্ঠুর কাজ করি তা ভেবে দেখি নে ব’লে মাংস গলাধঃকরণ করতে পারি। পৃথিবীতে অনেক কাজ আছে যার দূষণীয়তা মানুষের স্বহস্তে গড়, যার ভালোমন্দ– অভ্যাস প্রথা দেশাচার লোকাচার সমাজনিয়মের উপর নির্ভর করে। কিন্তু, নিষ্ঠুরতা সেরকম নয়, এটা একেবারে আদিম দোষ ; এর মধ্যে কোনো তর্ক নেই, কোনো দ্বিধা নেই ; হৃদয় যদি আমাদের অসাড় না হয়, হৃদয়কে যদি চোখ বেঁধে অন্ধ করে না রেখে দিই, তা হলে নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে নিষেধ একেবারে স্পষ্ট শুনতে পাই। অথচ ওটা আমরা হেসে-খেলে সকলে মিলে খুব অনায়াসে আনন্দ-সহকারে করে থাকি, এমন কি যে না করে তাকে কিছু অদ্ভূত বলে মনে ૨ ૦૭