পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেখানে সে দীর্ঘজীবন ধ’রে নানা ঘটনা নানা অবস্থার মধ্যে দিয়ে নানা সুখদুঃখ অতিবাহন করলে। তার বিয়ে হল, তার একে একে অনেকগুলি ছেলে হল, ছেলেরা মরে গেল, স্ত্রী মরে গেল, টাকাকড়ি সব নষ্ট হয়ে গেল— এবং সেই শোকে যখন সে একেবারে অধীর হয়ে পড়েছে এমন সময় হঠাৎ দেখলে, সে আপন রাজসভায় জলের টবের মধ্যে। ফকিরের উপর খুব ক্রোধ প্রকাশ করাতে সভাসদর সকলেই বললে, ‘মহারাজ, আপনি কেবলমাত্র জলে ডুব দিয়েই মাথা তুলেছেন। আমাদের সমস্ত জীবনট এবং জীবনের সমস্ত সুখদুঃখ এইরকম এক মুহূর্তের মধ্যে বদ্ধ ; আমরা সেটাকে যতই সুদীর্ঘ এবং যতই সুতীব্র মনে করি, যেমনি সংসারের টব থেকে মাথা তুলব অমনি সমস্তটা মুহূর্তকালের স্বপ্নের মতো ক্ষুদ্র হয়ে যাবে। কালের ছোটো বড়ো কিছুই নেই, আমরাই ছোটো বড়ো । কাল দিনের বেলাটা বেশ ছিল । আমার এই নদীর জলরেখা, বালির চর এবং ও পারের বনদৃশ্যের উপরে মেঘ এবং রৌদ্রের মুহুর্মুহু নতুন খেলা চলছিল– খোলা জানলার ভিতর দিয়ে যে দিকেই চোখ পড়ছিল এমন সুন্দর দেখাচ্ছিল। কোনো সুন্দর জিনিসকে ‘স্বপ্নের মতো কেন বলে ঠিক জানি নে, বোধ হয় নিছক সৌন্দর্যট। প্রকাশ করবার জন্যে। অর্থাৎ, ওর মধ্যে যেন REALITYর ভারটুকু মাত্র নেই। অর্থাৎ, এই শস্যক্ষেত্র থেকে যে আহার সংগ্ৰহ করতে হয়, এই নদী দিয়ে যে পাটের নেীকে যাবার রাস্তা, এই চর যে জমিদারের সঙ্গে খাজনা দিয়ে বন্দোবস্ত করে নিতে হয়, ইত্যাদি শত সহস্ৰ কথা মন থেকে দূর করে দিয়ে কেবলমাত্র হিসাবহীন বিশুদ্ধ আনন্দময় সৌন্দর্যের ছবি যখন আমরা উপভোগ করি তখন আমরা সেটাকে ‘স্বপ্নের মতো বলি। অন্ত্য সময়ে আমরা জগৎকে প্রধানতঃ সত্য বলে দেখি, তার পরে তাকে আমরা সুন্দর ૨છે ૨