পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X oხr সাহাজাদপুরের পথে [৭] জুলাই ১৮৯৪ সন্ধ্যাবেলায় পাবনা শহরের একটি খেয়াঘাটের কাছে বোট বাধা গেল। ও পার থেকে জনকতক লোক বায়া-তবলার সঙ্গে গান গাচ্ছে, একটা মিশ্রিত কলরব কানে এসে প্রবেশ করছে ; রাস্তা দিয়ে স্ত্রী-পুরুষ যারা চলেছে তাদের ব্যস্ত ভাব ; গাছপালার ভিতর দিয়ে দীপালোকিত কোঠাবাড়ি দেখা যাচ্ছে ; খেয়াঘাটে নানাশ্রেণী লোকের ভিড়। আকাশে নিবিড় একটা এক-রঙা মেঘ, সন্ধ্যাও অন্ধকার হয়ে এসেছে ; ও পারে সার-বাধা মহাজনি নৌকোয় আলে৷ জলে উঠল, পূজাঘর থেকে সন্ধ্যারতির কাসর ঘণ্টা বাজতে লাগল— বাতি নিবিয়ে দিয়ে বোটের জানলায় বসে আমার মনে ভারী একটা অপূর্ব আবেগ উপস্থিত হল। অন্ধকারের আবরণের মধ্যে দিয়ে এই লোকালয়ের একটি যেন সজীব হৃৎস্পন্দন আমার বক্ষের উপর এসে আঘাত করতে লাগল। এই মেঘলা আকাশের নীচে, নিবিড় সন্ধ্যার মধ্যে, কত লোক, কত ইচ্ছা, কত কাজ, কত গৃহ, গৃহের মধ্যে জীবনের কত রহস্য, মামুষে মানুষে কাছাকাছি ঘেঁষাঘেঁষি কত শতসহস্র প্রকারের ঘাত প্রতিঘাত। বৃহৎ জনতার সমস্ত ভালোমন্দ, সমস্ত সুখদুঃখ এক হয়ে তরুলতাবেষ্টিত ক্ষুদ্র বর্ষানদীর দুই তীর থেকে একটি সকরুণ সুন্দর সুগম্ভীর রাগিণীর মতো আমার হৃদয়ে এসে প্রবেশ করতে লাগল। আমার শৈশবসন্ধ্যা’ কবিতায় বোধ হয় কতকটা এই ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছিলুম। কথাটা সংক্ষেপে এই যে, মানুষ ক্ষুদ্র এবং ক্ষণস্থায়ী, অথচ ভালোমনা এবং সুখদুঃখ পরিপূর্ণ জীবনের প্রবাহ সেই পুরাতন মুগভীর কলম্বরে চিরদিন চলছে , ও চলবে— নগরের প্রান্তে সন্ধ্যার অন্ধকারে সেই २२b