পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ Σ Θ শিলাইদহ ৯ অগস্ট ১৮৯৪ নদী একেবারে কানায় কানায় ভরে এসেছে। ও পারটা প্রায় দেখা যায় না। জল এক-এক জায়গায় টগবগ করে ফুটছে, আবার এক-এক জায়গায় কে যেন অস্থির জলকে দুই হাত দিয়ে চেপে চেপে সমান করে মেলে দিয়ে যাচ্ছে। আজ দেখতে পেলুম, ছোটাে একটি মৃত পাখি স্রোতে ভেসে আসছে— ওর মৃত্যুর ইতিহাস বেশ বোঝা যাচ্ছে। কোন-এক গ্রামের ধারে বাগানের আম্রশাখায় ওর বাসা ছিল । সন্ধ্যার সময় বাসায় ফিরে এসে সঙ্গীদের নরম-নরম গরম ডানাগুলির সঙ্গে পাখা মিলিয়ে শ্রান্তদেহে ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ রাত্রে পদ্মা একটুখানি পাশ ফিরেছেন অমনি গাছের নিচেকার মাটি ধসে পড়ে গেছে—নীড়চু্যত পাখি হঠাৎ এক মুহুর্তের জন্যে জেগে উঠল, তার পরে আর তাকে জাগতে হল না। অামি যখন মফস্বলে থাকি তখন একটি বৃহৎ সর্বগ্রাসী রহস্যময়ী প্রকৃতির কাছে নিজের সঙ্গে অন্য জীবের প্রভেদ অকিঞ্চিৎকর ব’লে উপলব্ধি হয়। শহরে মনুষ্যসমাজ অত্যন্ত প্রধান হয়ে ওঠে; সেখানে সে নিষ্ঠুরভাবে আপনার সুখদুঃখের কাছে অন্য কোনো প্রাণীর সুখদুঃখ গণনার মধ্যেই আনে না। যুরোপেও মানুষ এত জটিল ও এত প্রধান যে, তারা জন্তুকে বড়ে বেশি জন্তু মনে করে। ভারতবর্ষীয়েরা মানুষ থেকে জন্তু ও জন্তু থেকে মানুষ হওয়াটাকে কিছুই মনে করে না ; এইজন্য আমাদের শাস্ত্রে সর্বভূতে দয়াটা একটা অসম্ভব আতিশয্য বলে পরিত্যক্ত হয় নি। মফস্বলে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে দেহে দেহে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ হলে সেই আমার ভারতবর্ষীয় স্বভাব জেগে ওঠে। একটি পাখির সুকোমল পালকে আবৃত স্পন্দমান ক্ষুদ্র বক্ষটুকুর মধ্যে জীবনের আনন্দ যে কত প্রবল, তা আর আমি অচেতনভাবে ভুলে থাকতে পারি নে। २२**