পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ Ꮌ8 শিলাইদহ ১০ অগস্ট ১৮৯৪ কাল খানিক রাত্রে জলের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। নদীর মধ্যে হঠাৎ একটা তুমুল কল্লোল এবং প্রবল চঞ্চলত উপস্থিত হয়েছে। বোধ হয় অকস্মাৎ একটা নতুন জলের স্রোত এসে পড়েছে। রোজই প্রায় এই রকম ব্যাপার ঘটছে। বসে আছি আছি, হঠাৎ দেখতে পাই নদী ছলছল কলকল ক’রে জেগে উঠেছে, আর সবসুদ্ধ খুব একটা ধুমধাম পড়ে গেছে। বোটের তক্তার উপর পা রাখলে বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়, তার নীচে দিয়ে কত রকমের বিচিত্র শক্তি অবিশ্রাম চলছে ; খানিকট র্কাপছে, খানিকটা টলছে, খানিকট৷ ফুলছে, খানিকটা আছাড় খেয়ে পড়ছে— ঠিক যেন আমি সমস্ত নদীর নাড়ির স্পন্দন অনুভব করছি। কাল অর্ধেক রাত্রে হঠাৎ একটা চঞ্চল উচ্ছ্বাস এসে নাড়ির মৃত্য অত্যন্ত বেড়ে উঠেছিল। আমি অনেক ক্ষণ জানলার ধারে বেঞ্চের উপর বসে রইলুম। খুব এক রকম ঝাপসা আলো ছিল— তাতে ক’রে সমস্ত উতলা নদীকে আরো যেন পাগলের মতো দেখাচ্ছিল। আকাশে মাঝে মাঝে মেঘ। একটা খুব জ্বলজ্বলে মস্ত তারার ছায়া দীর্ঘতর হয়ে জলের মধ্যে অনেক দূর পর্যন্ত একটা জালাময় বিদ্ধ বেদনার মতো থর্থর করে কঁপিছিল। নদীর দুই তীর অস্পষ্ট আলোকে এবং গাঢ় নিদ্রায় আচ্ছন্ন অচেতন । মাঝখান দিয়ে একটা নিদ্রাহীন উন্মত্ত অধীরতা ভরপুর বেগে একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে চলেছে। অর্ধেক রাত্রে ঐ রকম দৃশ্বের মধ্যে জেগে উঠে বসে থাকলে আপনাকে এবং জগৎকে কী-এক নতুন রকমের মনে হয়— দিনের বেলাকার লোকসংসর্গের জগৎটা মিথ্যা হয়ে যায়। আবার আজ সকালে উঠে আমার সেই গভীর রাত্রের জগৎ স্বপ্নের মতে কত দূরবর্তী এবং লঘু হয়ে গেছে। ર૭૦