পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ט\ צ צ শিলাইদহ ১৬ অগস্ট ১৮৯৪ এখন শুক্লপক্ষ কিনা, বেড়াবার সময় চমৎকার জ্যোৎস্না পাই। আমার দক্ষিণে সুবিস্তীর্ণমাঠ, মাঝে মাঝে আউষ ধান, এক প্রান্ত দিয়ে একটি সংকীর্ণ মেঠে রাস্তা, সম্মুখে পূর্বদিকে হাটের গোলাঘর,সামনে স্ত পাকার খড় জমা রয়েছে—জ্যোৎস্নায় সমস্ত ছবির মতো দেখাচ্ছে। সন্ধ্যাবেলাটি আমার মাথার উপর, আমার চোখের সামনে, আমার পায়ের তলায়, আমার চতুর্দিকে এমন সুন্দর, এমন শান্তিময়, এমন মানুষটির মতো নিবিড়ভাবে আমার নিকটবর্তী হয়ে আসে যে, আকাশের নক্ষত্ৰলোক থেকে আর পদ্মার সুদূর ছায়াময়ী তীররেখা পর্যন্ত সমস্তটি একটি নিভৃত গোপন গৃহের মতো ছোটো হয়ে ঘিরে দাড়ায় ; আমার মধ্যে যে দুটি প্রাণী আছে, বাইরের আমি এবং আমার অন্তঃপুরবাসী আত্মা,এই দুটিতে মিলে সমস্ত ঘরটি দখল ক’রে বসে থাকি ; এই দৃশ্যের মধ্যগত সমস্ত পশু পক্ষী প্রাণী আমাদের অন্তর্গত হয়ে যায়; কানেজলের কলশব্দ আসতে থাকে—মুখের উপর, মাথার উপর জ্যোৎস্নার শুভ্ৰহস্ত আদরের স্পর্শ করতে থাকে, আকাশে চকোর পাখি ডেকে চলে যায়, জেলের নৌকো পদ্মার মাঝখানে খরস্রোতের উপর দিয়ে বিনা চেষ্টায় অনায়াসে পিছলে বহে যেতে থাকে, আকাশব্যাপী স্নিগ্ধরাত্রি আমার রোমে রোমে প্রবেশ ক’রে ধীরে ধীরে উত্তাপ জুড়িয়ে দেয়— চোখ বুজে, কান পেতে, দেহ প্রসারিত ক’রে প্রকৃতির একমাত্র যত্বের জিনিসের মতো পড়ে থাকি, তার সহস্র সহচরী আমার সেবা করে। মনের কল্পনাও তার দুটি হস্তে থালা সাজিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ায় ; মৃদুমন্দ বাতাসের সঙ্গে তার কোমল অঙ্গুলির স্পর্শ আমার চুলের মধ্যে অনুভব করি। శిరిg