পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রত্যাশা করতে বলেছিল ? হঠাৎ একদিন বৈশাখের প্রভাতে নববর্ষের নূতন পত্র পুষ্প আলোক ও সমীরণের মধ্যে জেগে উঠে যখন শুনলুম আমার বয়স সাতাশ তখন আমার মনে এই-সকল কথার উদয় হল । আসল কথা— যতদিন আপনি কোনো লোককে বা বস্তুকে সম্পূর্ণ না জানেন ততদিন কল্পনা ও কৌতুহল মিশিয়ে তার প্রতি একপ্রকার বিশেষ আসক্তি থাকে। পচিশ বৎসর পর্যন্ত কোনো লোককে সম্পূর্ণ জানা যায় না— তার যে কী হবে, কী হতে পারে কিছুই বলা যায় না ; তার যতটুকু সস্তৃত তার চেয়ে সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু সাতাশ বৎসরে মানুষকে একরকম ঠাহর করা যায়— বোঝা যায় তার যা হবার তা একরকম হয়েছে, এখন থেকে প্রায় এই রকমই বরাবরই চলবে, এ লোকের জীবনে হঠাৎ আশ্চর্য হবার আর কোনো কারণ রইল না। এই সময়ে তার চার দিক থেকে কতকগুলো লোক ঝরে যায়, কতকগুলো লোক স্থায়ী হয়— এই সময়ে যারা রইল তারাই রইল। কিন্তু আর নূতন প্রেমের আশাও রইল না, নূতন বিরহের আশঙ্কাও গেল। অতএব এ একরকম মন্দ নয়। জীবনের আরামজনক স্থায়িত্ব লাভ করা গেল। আপনাকেও বোঝা গেল এবং অন্তদেরও বোঝা গেল। ভাবনা গেল । আজকাল আমাদের এখানে বর্ষা পড়েছে। ঘন মেঘ ও অবিরাম বৃষ্টি । এই সময়ই তো বন্ধুসংগমের সময়। এই সময়টা ইচ্ছে করছে, তাকিয়া আশ্রয় ক’রে প’ড়ে পড়ে যা-তা বকবিকি করি। বাইরে কেবল ঝুপ, বুপ বৃষ্টি, ঝন ঝন বজ্র, হু হু বাতাস এবং রাজপথে সেকড়াগাড়ির জীর্ণ চক্রের কদাচিৎ খড়, খড়, শব্দ। ইংরাজ-রাজের উপদ্রবে তাও ভালো করে হবার জো নেই — ইংরাজ-রাজত্বে বজ্র বৃষ্টি বাতাস এবং সেকড়া গাড়ির অভাব নেই, কিন্তু এই রাক্ষসী তার দেশ-বিদেশ-ব্যাপী আফিস আদালত २२