পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের প্রাস্তে পাগড়ি এবং ঢিলে কাপড় -পরা দোকানি খর্মজ এবং মেওয়া বিক্রি করছে— পথের ধারে বৃহৎ রাজপ্রাসাদ, ভিতরে ধূপের গন্ধ, জানলার কাছে বৃহৎ তাকিয়া এবং কিংখাব বিছানো— জরির চটি, ফুলো পায়জামা এবং রঙিন কাচলি -পরা আমিনা জোবেদি সুফি– পাশে পায়ের কাছে কুণ্ডলায়িত গুড়গুড়ির নল গড়াচ্ছে, দরজার কাছে জমকালে-কাপড়-পরা কালে হাব যি পাহার দিচ্ছে —এবং এই রহস্যপূর্ণ অপরিচিত সুদূর দেশে, এই ঐশ্বর্যময় সৌন্দর্যময় ভয়ভীষণ বিচিত্র প্রাসাদে, মানুষের হাসিকান্না আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কত শতসহস্র রকমের সম্ভব অসম্ভব গল্প তৈরি হচ্ছে। অামার এই সাজাদপুরের দুপুর বেলা গল্পের দুপুর বেলা। মনে আছে, ঠিক এই সময়ে এই টেবিলে বসে আপনার মনে ভোর হয়ে পোস্ট মাস্টার গল্পটা লিখেছিলুম। আমিও লিখছিলুম এবং আমার চার দিকের অালো বাতাস ও তরুশাখার কম্পন তাদের ভাষা যোগ ক’রে দিচ্ছিল। এই রকম চতুর্দিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে গিয়ে নিজের মনের মতো একটা কিছু রচনা ক’রে যাওয়ার যে সুখ তেমন সুখ জগতে খুব অল্পই আছে। আজ সকালে বসে ছড়া সম্বন্ধে একটা লেখা লিখতে প্রবৃত্ত হয়েছিলুম ; বড়ে ভালো লাগছিল। ছড়ার রাজ্যে আইনকানুন নেই, মেঘরাজ্যের মতো। দুর্ভাগ্যক্রমে যে রাজ্যেই থাকি আইনকামুনের বৈষয়িক রাজ্যকে বাধা দেবার জো নেই ; আমার লেখার মাঝখানে তারই একটা উপদ্রব উপস্থিত হল, আমার মেঘের ইমারত উড়িয়ে দিলে। এইসব ব্যাপারে আহারের সময় এসে পড়ল। দুপুর বেলায় পেট ভরে খাওয়ার মতো এমন জড়ত্বজনক আর কিছুই নেই। আমরা বাঙালিরা কষে মধ্যাহ্নভোজন করি ব’লেই মধ্যাহ্নটাকে হারাই । দরজা বন্ধ ক’রে তামাক খেতে খেতে, পান চিবোতে চিবোতে, পরিতৃপ্ত নিদ্রার আয়োজন হতে ૨8 ૦