পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSe পতিসর ১০ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ ভাদ্রমাসের দিন, বাতাস বেশি নেই, বোটের শিথিল পাল ঝুলে ঝুলে পড়ছে— নৌকোটি আলস্তমস্থর গমনে অত্যন্ত উদাসীনের মতো চলেছে। এই শৈবালবিকীর্ণ সুবিস্তীর্ণ জলরাজ্যের মধ্যে শরতের উজ্জল রৌদ্রে আমি জানলার কাছে এক চৌকিতে বসে আর-এক চৌকির উপরে পা দিয়ে সমস্ত বেলা কেবল গুন গুন ক’রেগান করছি। রামকেলি প্রভৃতি সকাল বেলাকার সুরের একটু আভাস লাগবা মাত্র এমন একটি বিশ্বব্যাপী করুণা বিগলিত হয়ে চারি দিককে বাষ্পাকুল করছে যে এইসমস্ত রাগিণীকে সমস্ত আকাশের, সমস্ত পৃথিবীর নিজের গান ব’লে মনে হচ্ছে । এ একটা ইন্দ্রজাল, একটা মায়ামন্ত্র। আমার এই গুন-গুন-গুঞ্জরিত মুরের সঙ্গে কত টুকরো টুকরো কথা যে আমি জুড়ি তার সংখ্যা নেই। এমন এক লাইনের গান সমস্ত দিন কত জমছে এবং কত বিসর্জন দিচ্ছি। এই চৌকিটাতে বসে আকাশ থেকে সোনালি রোদস্তুরটুকু চোখ দিয়ে চাখতে চাখতে এবং জলের উপরকার শৈবালের সরস কোমলতার উপর মনটাকে বুলিয়ে চলতে চলতে, যতটুকু অনায়াস আলস্য -ভরে আপনি মাথায় এসে পড়ে তার বেশি চেষ্টা করা আপাতত আমার সাধ্যাতীত । আজ সমস্ত সকাল নিতান্ত সাদাসিধা রামকেলিতে যে গোটা দুই-তিন ছত্র বারবার আবৃত্তি করছিলুম সেটুকু মনে আছে, নমুনাস্বরূপ উদ্ধৃত ক’রে দিলুম— ওগো, তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে – (আমার নিত্যনব!) এসো গন্ধে বরনে গানে । আমি যে দিকে নিরখি তুমি এসে হে আমার মুগ্ধমুদিত নয়ানে । ૨8 ૨