পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છે ૨ છે দিঘাপতিয়া জলপথে ২০ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ বড়ো বড়ো গাছ জলের মধ্যে সমস্ত গুড়িটি ডুবিয়ে দিয়ে শাখা প্রশাখা জলের উপর অবনত করে দিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমগাছ বটগাছের অন্ধকার জঙ্গলের ভিতর নৌকা বাধা, এবং তারই মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়ে গ্রামের লোকেরা স্নান করছে। এক-একটি কুঁড়েঘর স্রোতের মধ্যে দাড়িয়ে রয়েছে, তার চার পাশের প্রাঙ্গণ জলমগ্ন । ধানের খেতের ভিতর দিয়ে বোট সরু সরু শব্দে যেতে যেতে হঠাৎ কোনো জলাশয়ের মধ্যে গিয়ে পড়ে ; সেখানে নালবনের মধ্যে সাদা সাদা নালফুল ফুটে আছে, পানকৌড়ি জলের ভিতর ডুব দিয়ে দিয়ে মাছ ধরছে। জল যেখানে সুবিধা পাচ্ছে প্রবেশ করছে— স্থলের এমন পরাভব আর-কোথাও দেখা যায় না। আর-একটু জল বাড়লেই ঘরের ভিতরে জল প্রবেশ করবে ; তখন মাচা বেঁধে তার উপর বাস করতে হবে, গোরুগুলো দিনরাত একহাটু জলের মধ্যে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মরবে ; রাজ্যের সাপ জলমগ্ন গর্ত ত্যাগ করে ঘরের চালে আশ্রয় নেবে এবং যেখানকার যত গৃহহীন কীটপতঙ্গ সরীসৃপ মানুষের সহবাস গ্রহণ করবে। যখন গ্রামের চারি দিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা-গুল্ম পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জন চারি দিকে ভেসে বেড়ায়, পাটপচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেট-মোট পা-সরু রুগ্ন ছেলেমেয়েরা যেখানে সেখানে জলে কাদায় মাখামাখি ব্যাপার্কাপি করতে থাকে, মশার বাক স্থির জলের উপর একটি বাষ্পস্তরের মতো বাক বেঁধে ভেসে বেড়ায়, গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠাণ্ডা হাওয়ায় বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাটুর २8७