পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৩ বোয়ালিয়া ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ আমি অনেক সময় ভেবে দেখেছি, সুখী হলুম কি হুঃখী হলুম সেইটে আমার পক্ষে শেষ কথা নয়। আমাদের অন্তরতম প্রকৃতি । সমস্ত সুখদুঃখের ভিতরে নিজের একটা প্রসার অনুভব করতে থাকে। আমাদের ক্ষণিক জীবন এবং চিরজীবন দুটো একত্র সংলগ্ন হয়ে আছে মাত্র, কিন্তু দুটো এক নয়, এ আমি স্পষ্ট উপলব্ধি করি। আমাদের ক্ষণিক জীবনই সুখ দুঃখ ভোগ করে ; আমাদের চিরজীবন সেই সুখ-দুঃখ নেয় না, তার থেকে একটা তেজ সঞ্চয় করে। গাছের পাতা প্রতিদিন রৌদ্রে প্রসারিত হয়ে শুষ্ক হয়ে ঝরে যাচ্ছে, আবার নূতন পাতা গজাচ্ছে ; গাছের ক্ষণিকজীবন কেবল রৌদ্র ভোগ করছে এবং সেই উত্তাপেই শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে, আর গাছের চিরজীবন তার ভিতর থেকে দাহহীন চির-অগ্নি সঞ্চয় করছে। আমাদেরও প্রতি দিনের প্রতি মুহূর্তের পল্লবরাশি চতুর্দিকে প্রসারিত হয়ে জগতের সমস্ত প্রবহমান সুখদুঃখ ভোগ করছে এবং সেই সুখদুঃখের উত্তাপেই শুষ্ক হয়ে, দগ্ধ হয়ে, ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে ; কিন্তু আমাদের চিরজীবনকে সেই প্রতি মুহুর্তের দাহ স্পর্শ করতে পারছে ন, অথচ তার তেজটুকু সে ক্রমাগতই গ্রহণ করছে। যে মানুষের প্রতি মুহূর্তের সুখদুঃখ-ভোগ-শক্তি সামান্ত, তার দাহও অল্প, তেমনি তার চিরপ্রাণের সঞ্চয়ও অকিঞ্চিৎকর । সুখদুঃখের তাপ থেকে সংরক্ষিত হয়ে তাদের ক্ষণিক জীবনটা অনেক দিন স্থির থাকে, তারা অচেতনতার আবরণে ক্ষণিককে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী করে রাখে ; দু-দিনকে এমনি তাজা রেখে দেয় যে হঠাৎ মনে হয় তা চিরদিনের ; সংসারের সামান্ত ব্যাপারকে এমনি করে তোলে যেন তা অসামান্ত । وR8V