পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২8 বোয়ালিয়া ২৫ সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ আমরা যখন খুব বড়ে রকমের একটা আত্মবিসর্জন করি তখন কেন করি ? একটা মহৎ আবেগে আমাদের ক্ষণিক জীবনট। আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তার স্বখদুঃখ আমাদের আর স্পর্শ করতে পারে না। আমরা হঠাৎ দেখতে পাই, আমরা আমাদের সুখদুঃখের চেয়ে বড়ো, আমরা প্রতিদিনের তুচ্ছ বন্ধন থেকে মুক্ত। সুখের চেষ্টা এবং দুঃখের পরিহার, এই আমাদের ক্ষণিক জীবনের প্রধান নিয়ম ; কিন্তু এক-একটা সময় আসে যখন আমরা আবিষ্কার করতে পারি যে, আমাদের ভিতরে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে সে নিয়ম খাটে না। তখন আমরা আমাদের ক্ষণিক জীবনটাকে পরাভূত ক’রেই একটা আনন্দ পাই, দুঃখকে গলার হার ক’রে নিয়েই মনে উল্লাস জন্মায়। তখন মনে হয়, অস্তরের সেই স্বাধীন পুরুষের বলেই সুখ-দুঃখের ভিতর দিয়ে চিরকাল আমি আমার প্রকৃতির সফলতা সাধন করব। কিন্তু আবার চারি দিকের সংসারের জনতা, প্রতিদিনের ক্ষুধা তৃষ্ণ, প্রবল হয়ে উঠে সেই অন্তরতম স্বাধীনতার ক্ষেত্রটিকে আমাদের চোখ থেকে ঢেকে ফেলে ; তখন আত্মবিসর্জন সুকঠিন হয়ে ওঠে। আমি যখন একলা মফস্বলে থাকি তখন প্রকৃতির ভিতরকার আনন্দ আমার অস্তরের আনন্দনিকেতনের দ্বার খুলে দেয় ; গানের মুরের দ্বার। গানের কথাগুলো যেমন অমরতা প্রাপ্ত হয় তেমনি প্রাত্যহিক সংসারটা অস্তরের চিরানন্দরাগিণীর দ্বারা চিরমহিমা লাভ করে ; আমাদের সমস্ত স্নেহপ্রীতির সম্বন্ধ একটি বিনম্র ধর্মোপাসনার ভাবে জোতির্ময় হয়ে ওঠে– দুঃখবেদনার দুঃখত্ব যে চলে যায় তা নয়, २8१