পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ\©¢ শিলাইদহ ৪ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৫ ইচ্ছা করছে, শীতটা ঘুচে গিয়ে প্রাণ খুলে বসন্তের বাতাস দেয় —আচকানের বোতামগুলো খুলে একবার খোলা জালিবোটের উপর পী ছড়িয়ে দিই এবং কর্তব্যের রাস্তা ছেড়ে দিনকতক সম্পূর্ণ অকেজো কাজে মন দিই। বছরের ছ মাস আমি এবং ছ মাস আর কেউ যদি সাধনার সম্পাদক থাকে তা হলেই ঠিক সুবিধামত বন্দোবস্ত হয়। কারণ, সম্বৎসর খেপামি করবার ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই এবং সম্বৎসর অপ্রমত্ততা বজায় রেখে চলা আমার মতো লোকের পক্ষে দুঃসাধ্য। এত বড়ো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তু মাস অন্তর ঋতুপরিবর্তন হচ্ছে, আর আমরা ক্ষুদ্র মনুষ্য বারো মাস সমভাবে ভদ্রত রক্ষা ক’রে চলি কী করে। মানুষের মহা মুশকিল এই, প্রকৃতির বিরুদ্ধে সমাজের আইন অনুসারে তাকে তিন শো পয়ষট্টি দিন এক ভাবেই চলতে হয়। আসলে নিজের মধ্যে যে একটা চিরনূতন চিররহস্য আছে সেটাকে সলজে সভয়ে গোপন ক’রে নিজেকে সর্বসাধারণের কাছে নিতান্ত চিরাভ্যস্ত রুটিন-চালিত যন্ত্রটির মতো দেখাতে হবে। সেই জন্যে থেকে থেকে মানুষ বিগড়ে যায়, বিদ্রোহী হয়ে ওঠে ; সেই জন্যে অবাধে আপনাকে উপলব্ধি করতে শিল্প-সাহিত্যের আশ্রয় গ্রহণ করতে চায়। সেই জন্যে সাহিত্য দস্তুরের-আঁচল-ধরা হলে নিজের উদ্দেশ্যকে নষ্ট করে। সেই জন্যে বৈঠকখানাঘরে শিষ্টালাপে যেসব কথা চলে না সাহিত্যে সেগুলি গভীরতা ও উদারতা লাভ ক’রে অসংকোচে আপনাকে প্রকাশ করতে পারে। এই জন্যই ড্রইংরুমের চা-পান-সভার সুসভ্য সীমার মধ্যে সাহিত্যকে বদ্ধ করতে গেলে বিরাট বিশ্বপ্রকৃতিকে ছিটের গাউন পরানোর মতো হয়। ২৬২