পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8Ꮔ শিলাইদহ ১৪ অগস্ট ১৮৯৫ যত বিচিত্র রকমের কাজ হাতে নিচ্ছি ততই কাজ জিনিসটার পরে আমার শ্রদ্ধা বাড়ছে। কর্ম যে অতি উৎকৃষ্ট পদার্থ সেটা কেবল পুথির উপদেশ-রূপেই জানতুম। এখন জীবনেই অনুভব করছি কাজের মধ্যেই পুরুষের যথার্থ চরিতার্থতা ; কাজের মধ্য দিয়েই জিনিস চিনি, মানুষ চিনি, বৃহৎ কর্মক্ষেত্রে সত্যের সঙ্গে মুখামুখি পরিচয় ঘটে। দেশদেশাস্তরের লোক যেখানে বহু দূরে থেকেও মিলেছে সেইখানে আজ আমি নেমেছি ; মানুষের পরস্পর শৃঙ্খলাবদ্ধ এই একটা প্রয়োজনের চিরসম্বন্ধ, কর্মের এই সুদূরপ্রসারিত ঔদার্য আমার প্রত্যক্ষগোচর হয়েছে। কাজের একটা মাহাত্ম্য এই যে, কাজের খাতিরে নিজের ব্যক্তিগত সুখদুঃখকে অবজ্ঞা ক’রে যথোচিত সংক্ষিপ্ত করে চলতে হয়। মনে আছে, সাজাদপুরে থাকতে সেখানকার খানসামা এক দিন সকালে দেরি করে আসাতে আমি রাগ করেছিলুম ; সে এসে তার নিত্যনিয়মিত সেলামটি করে ঈষৎ অবরুদ্ধ কণ্ঠে বললে, ‘কাল রাত্রে আমার আট বছরের মেয়েটি মারা গেছে।’ এই ব’লে ঝাড়নটি কাধে ক’রে আমার বিছানাপত্র ঝাড়পোছ করতে গেল। কঠিন কর্মক্ষেত্রে মর্মান্তিক শোকেরও অবসর নেই। অবসরটা নিয়েই বা ফল কী। কর্ম যদি মানুষকে বৃথা অমুশোচনার বন্ধন থেকে মুক্ত ক’রে সম্মুখের পথে প্রবাহিত ক’রে নিয়ে যেতে পারে, তবে ভালোই তো। যা হবার নয় সে তো চুকেছে, যা হতে পারে তা হাতের কাছে প্রস্তুত। যে মেয়ে মরে গেছে তার জন্যে শোক ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নে, যে ছেলে বেঁচে আছে তার জন্যে ছোটো বড়ো সব কাজই তাকিয়ে আছে। কাজের ২৭৯