পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাধনা। চরম বেদনায় তাকে জন্মদান করতে হয়, নাড়ির শোণিত দিয়ে তাকে প্রাণদান করতে হয়, তার পরে জীবনে মুখ পাই আর না পাই আনন্দে চরিতার্থ হয়ে মরতে পারি। যা মুখে বলছি, যা লোকের মুখে শুনে প্রত্যহ আবৃত্তি করছি, তা যে আমার পক্ষে কতই মিথ্যা তা আমরা বুঝতেই পারি নে। এ দিকে আমাদের জীবন ভিতরে ভিতরে নিজের সত্যের মন্দির প্রতিদিন একটি একটি ইট নিয়ে গড়ে তুলছে। জীবনের সমস্ত সুখদুঃখকে যখন বিচ্ছিন্ন ক্ষণিক ভাবে দেখি তখন আমাদের ভিতরকার এই অনন্ত স্বজনরহস্ত ঠিক বুঝতে পারি নে— প্রত্যেক পদটা বানান করে পড়তে হলে যেমন সমস্ত বাক্যটার অর্থ এবং ভাবের ঐক্য বোঝা যায় না সেই রকম। কিন্তু নিজের ভিতরকার এই স্বজন-ব্যাপারের অখণ্ড ঐক্যসূত্র যখন একবার অনুভব করা যায় তখন এই সর্জ্যমান অনন্ত বিশ্বচরাচরের সঙ্গে নিজের যোগ উপলব্ধি করি। বুঝতে পারি, যেমন গ্ৰহ নক্ষত্র চন্দ্র সূর্য জলতে জলতে ঘুরতে ঘুরতে চিরকাল ধরে তৈরি হয়ে উঠছে আমার ভিতরেও তেমনি অনাদি কাল ধরে একটা স্বজন চলছে ; আমার সুখদুঃখ বাসনা বেদন তার মধ্যে আপনার আপনার স্থান গ্রহণ করছে। এর থেকে কী যে হয়ে উঠছে তা আমরা স্পষ্ট জানি নে; কারণ, আমরা একটি ধূলিকণাকেও জানি নে। কিন্তু নিজের প্রবহমাণ জীবনকে যখন নিজের বাহিরে নিখিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেখি তখন জীবনের সমস্ত দুঃখগুলিকেও একটা বৃহৎ আনন্দসূত্রের মধ্যে গ্রথিত দেখতে পাই; আমি আছি, আমি চলছি, আমি হয়ে উঠছি, এইটেকেই একটা বিরাট ব্যাপার বলে বুঝতে পারি। আমি আছি এবং আমার সঙ্গে সমস্তই আছে— আমাকে ছেড়ে কোথাও একটি অণুপরমাণুও থাকতে পারে না ; এই সুন্দর শরংপ্রভাতের সঙ্গে, এই জ্যোতির্ময় শূন্যের সঙ্গে, আমার অন্তরাত্মার २b~७