পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X (t কালিগ্রাম ৫ মাঘ ১৮৯১ বেশ কুঁড়েমি করবার মতো বেলাটা। কেউ তাড়া দেবার লোক নেই, তা ছাড়া প্রজা এবং কাজের ভিড় এখনো চতুর্দিকে ছেকে ধরে নি। সবসুদ্ধ খুব ঢিলে-ঢ়িলে একলা-একলা কী-এক-রকম মনে হচ্ছে। যেন পৃথিবীতে অত্যাবশ্বক কাজ বলে একটা কিছুই নেই— এমন-কি, নাইলেও চলে, না নাইলেও চলে, এবং ঠিক সময়মত খাওয়াটা কলকাতার লোকের মধ্যে প্রচলিত একটা বহু দিনের কুসংস্কার বলে মনে হয়। এখানকার চতুর্দিকের ভাবগতিকও সেইরকম। একটা ছোট্টো নদী অাছে বটে কিন্তু তাতে কানাকড়ির স্রোত নেই, সে যেন আপন শৈবালদামের মধ্যে জড়ীভূত হয়ে অঙ্গবিস্তার করে দিয়ে পড়ে পড়ে ভাবছে যে যদি না চললেও চলে তবে আর চলবার দরকার কী। জলের মাঝে মাঝে যে লম্বা ঘাস এবং জলজ উদ্ভিদ জন্মেছে, জেলেরা জাল ফেলতে না এলে সেগুলো সমস্ত দিনের মধ্যে একটু নাড়া পায় না। পাচটাছটা বড়ে বড়ে নৌকো সারি সারি বাধা আছে– তার মধ্যে একটার ছাতের উপর একজন মাঝি আপাদমস্তক কাপড় মুড়ে রোদস্তুরে নিদ্রা দিচ্ছে ; আর-একটার উপর একজন বসে বসে দড়ি পাকাচ্ছে এবং রোদ পোহাচ্ছে, দাড়ের কাছে একজন আধ-বৃদ্ধ লোক অনাবৃত গাত্রে ব’সে অকারণে আমাদের বোটের দিকে চেয়ে আছে। ডাঙার উপরে নানান রকমের নানান লোক অত্যন্ত মৃত্যুমন্দ অলস চালে কেন যে আসছে, কেন যে যাচ্ছে, কেন যে বুকের মধ্যে নিজের দুটাে হাটুকে আলিঙ্গন ক’রে ধীরে উবু হয়ে বসে আছে, কেন যে অবাক হয়ে বিশেষ কোনো কিছুর দিকে না 8 \o