পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr কালিগ্রাম জানুয়ারি ১৮৯১ ঐ-যে মস্ত পৃথিবীটা চুপ ক’রে পড়ে রয়েছে ওটাকে এমন ভালোবাসি । ওর এই গাছপালা নদী-মাঠ কোলাহল-নিস্তব্ধত। প্রভাত-সন্ধ্যা সমস্তটা-সুদ্ধ তু হাতে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, পৃথিবীর কাছ থেকে আমরা যে-সব পৃথিবীর ধন পেয়েছি এমন-কি কোনো স্বর্গ থেকে পেতুম। স্বৰ্গ আর কী দিত জানি নে, কিন্তু এমন কোমলতা-দুর্বলতা-ময় এমন সকরুণ আশঙ্কা-ভরা অপরিণত এই মানুষগুলির মতো এমন আপনার ধন কোথা থেকে দিত? অামাদের এই মাটির মা, আমাদের এই আপনাদের পৃথিবী, এর সোনার শস্যক্ষেত্রে, এর স্নেহশালিনী নদীগুলির ধারে, এর সুখদুঃখ-ময় ভালোবাসার লোকালয়ের মধ্যে এই-সমস্ত দরিদ্র মর্তহৃদয়ের অশ্রুর ধনগুলিকে কোলে ক’রে এনে দিয়েছে । আমরা হতভাগ্যর তাদের রাখতে পারি নে, বাচাতে পারি নে, নানা অদৃশ্য প্রবল শক্তি এসে বুকের কাছ থেকে তাদের ছিড়ে ছিড়ে নিয়ে যায়, কিন্তু বেচারা পৃথিবীর যত দূর সাধ্য তা সে করেছে। আমি এই পৃথিবীকে ভারি ভালোবাসি। এর মুখে ভারি একটি সুদূরব্যাপী বিষাদ লেগে আছে; যেন এর মনে মনে আছে, ‘আমি দেবতার মেয়ে, কিন্তু দেবতার ক্ষমতা আমার নেই। আমি ভালোবাসি, কিন্তু রক্ষা করতে পারি নে; আরম্ভ করি, সম্পূর্ণ করতে পারি নে ; জন্ম দিই, মৃত্যুর হাত থেকে বাচাতে পারি নে।’ এইজন্তে স্বর্গের উপর আড়ি ক’রে আমি আমার দরিদ্র মায়ের ঘর আরও বেশি ভালোবাসি ; এত অসহায়, অসমর্থ, অসম্পূর্ণ ভালোবাসার সহস্ৰ আশঙ্কায় সর্বদা চিন্তাকাতর ব’লেই । 6*२