পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরুকে কাঠির বাড়ি খোচা দিতে থাকে তখন আমার নিতান্ত অসহ বোধ হয়। আজ সকালে দেখছিলুম, একজন মেয়ে তার একটি ছোটো উলঙ্গ শীর্ণ কালো ছেলেকে এই খালের জলে নাওয়াতে এনেছে— অাজ ভয়ংকর শীত পড়েছে— জলে দাড় করিয়ে যখন ছেলেটার গায়ে জল দিচ্ছে তখন সে করুণ স্বরে কাদছে আর র্কাপছে, ভয়ানক কাশিতে তার গলা খন খন করছে ; মেয়েটা হঠাৎ তার গালে এমন একটা চড় মারলে যে আমি আমার ঘর থেকে তার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেলুম। ছেলেটা বেঁকে পড়ে হাটুর উপর হাত দিয়ে ফুলে ফুলে কঁদিতে লাগল, কাশিতে তার কান্না বেধে যাচ্ছিল। তার পরে ভিজে গায়ে সেই উলঙ্গ কম্পান্বিত ছেলের নড়া ধরে বাড়ির দিকে টেনে নিয়ে গেল। এই ঘটনাটা নিদারুণ পৈশাচিক ব’লে বোধ হল। ছেলেটা নিতান্ত ছোটো, আমার খোকার বয়সী। এরকম একটা দৃশ্য দেখলে হঠাৎ মানুষের যেন একটা ideal এর উপর আঘাত লাগে, বিশ্বস্তচিত্তে চলতে চলতে খুব একটা হু চট লাগার মতো । ছোটো ছেলেরা কী ভয়ানক অসহায়— তাদের প্রতি অবিচার করলে তারা নিরুপায় কাতরতার সঙ্গে কেঁদে নিষ্ঠুর হৃদয়কে আরও বিরক্ত করে তোলে, ভালো ক’রে আপনার নালিশ জানাতেও পারে না। মেয়েট শীতে সর্বাঙ্গ আচ্ছন্ন ক’রে এসেছে আর ছেলেটার গায়ে এক টুকরো কাপড়ও নেই, তার উপরে কাশি, তার উপরে এই ডাকিনীর হাতের মার ! & 3)