পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাধা পাখির মতোপাখা ঝাপটে ঝটুপটু ঝটুপটু করছিল— ঝড়টথেকে থেকে চাহি চাহি শব্দ ক’রে একটা বিপর্যয় চিলের মতে হঠাৎ এসে প’ডে বোটের ঝুটি ধ’রে ছে৷ মেরে ছিড়ে নিয়ে যেতে চায়, বোটটা অমনি সশব্দে ধড়ফড়, ক'রে ওঠে। অনেক ক্ষণ বাদে বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে ঝড় থেমে গেল। আমি হাওয়া খেতে চেয়েছিলুম ; হাওয়াটা কিছু বেশি খাইয়ে দিলে , একেবারে আশাতিরিক্ত। যেন কে ঠাট্টা ক’রে বলে যাচ্ছিল, “এইবার পেট ভরে হাওয়া খেয়ে নাও, তার পরে সাধ মিটলে কিঞ্চিৎ জল খাওয়াব, তাতে এমনি পেট ভরবে যে ভবিষ্যতে আর কিছু খেতে হবে না। আমরা কি না প্রকৃতির নাতিসম্পর্ক, তাই তিনি মধ্যে মধ্যে এই রকম একটু-আধটু তামাশা ক’রে থাকেন। আমি তো পূর্বেই বলেছি, জীবনটা একটা গম্ভীর বিদ্রুপ, এর মজাটা বোঝা একটু শক্ত, কারণ, যাকে নিয়ে মজা করা হয় মজার রসটা সে তেমন গ্রহণ করতে পারে না। এই মনে করে, দুপুর রাত্রে খাটে শুয়ে আছি, হঠাৎ পৃথিবীটা ধরে এমনি নাড়া দিলে যে কে কোথায় পালাবে পথ পায় না। মতলবটা খুব নতুন রকমের এবং মজাটা খুব আকস্মিক তার আর সন্দেহ নেই— বড়ে বড়ে সন্ত্রান্ত ভদ্রলোকদের অর্ধেক রাত্রে উর্ধ্বশ্বাসে অসম্বত অবস্থায় বিছানার বাইরে দৌড় করানো কি কম কৌতুক ! এবং দুটো-একটা সদ্যোনিদ্রোথিত হতবুদ্ধি নিরীহ লোকের মাথার উপরে বাড়ির আস্ত ছাতটা ভেঙে আনা কি কম ঠাট্টা । হতভাগ্য লোকটা যেদিন ব্যাঙ্কে চেক্ লিখে রাজমিস্ত্রির বিল শোধ করছিল, রহস্তপ্রিয়া প্রকৃতি সেই দিন বসে বসে কত হেসেছিল। ® %