পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করলুম, আর কত দুর। তারা বললে, আর বেশি নেই, তিন ক্রোশের কিছু উপর বাকি আছে। শুনে পালকির মধ্যে একটু নড়েচড়ে বসলুম। পালকিতে আমার আধখানা বৈ ধরে না ; কোমর টন টন করছে, পা ঝিন্‌ ঝিন করছে, মাথা ঠক্ ঠক্‌ করছে — যদি নিজেকে তিন-চার ভাজ ক’রে মুড়ে রাখবার কোনো উপায় থাকত তা হলেই এই পালকিতে কিছু সুবিধে হতে পারত। রাস্তা অতি ভয়ানক। সর্বত্রই এক-হাটু কাদা ; এক-এক জায়গায় পিছলের ভয়ে বেহারারা অতি সাবধানে এক-এক পা ক’রে পা ফেলছে— তিন-চারবার তাদের পা হড়কে গিয়েছিল, তাড়াতাড়ি সামলে নিলে। মাঝে মাঝে রাস্তা নেই, ধানের খেতে অনেকখানি ক’রে জল দাড়িয়েছে, তারই উপর দিয়ে ছপ, ছপ, শব্দ ক’রে এগোচ্ছি। মেঘে রাত খুব অন্ধকার হয়ে এসেছে, টিপ টপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তৈলাভাবে মশালটা মাঝে মাঝে নিবে যাচ্ছে, আবার অনেক ফু দিয়ে দিয়ে জ্বালাতে হচ্ছে, বেহারারা সেই আলোকের অভাব নিয়ে ভারি বকাবকি বাধিয়ে দিয়েছে। এমনি করে খানিক দূরে এলে পর বরকন্দাজ জোড়হাতে নিবেদন করলে, একটা নদী এসেছে, এইখানে পালকি নৌকো করে পার করতে হবে, কিন্তু এখনো নেীকে এসে পৌছয় নি, অবিলম্বে এল ব’লে, অতএব খানিক ক্ষণ এইখানে পালকি রাখতে হবে। পালকি রাখলে। তার পরে নৌকো আর কিছুতে এসে পৌছোয় না। আস্তে আস্তে মশালট নিবে গেল। সেই অন্ধকার নদীতীরে বরকন্দাজগুলো ভাঙা গলায় উধবশ্বাসে নৌকোওয়ালাকে ডাকতে লাগল ; নদীর পরপার থেকে তার প্রতিধ্বনি ফিরে আসতে লাগল, কিন্তু কোনো নৌকোওয়ালা সাড়া দিলে না। মুকুন্দো—ও-ও-ও’, ‘বালকৃষ্ণ-অ-অ-অ’, ‘নীলকণ্ঠ—অ-অ-অ’– এমন কাতর স্বরে আহবান করলে গোলকধাম ويbrN