পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থেকে মুকুন্দ এবং কৈলাসশিখর থেকে নীলকণ্ঠ নেমে আসতেন, কিন্তু কর্ণধার কর্ণ রোধ করে অবিচলিত ভাবে নিজ নিকেতনে বিশ্রাম করতে লাগল। নির্জন নদীতীরে একটি কুঁড়েঘর মাত্রও নেই ; কেবল পথপার্শ্বে চালকহীন বাহনহীন একটি শূন্ত গোরুর গাড়ি পড়ে রয়েছে— আমাদের বেহারাগুলো তারই উপর চেপে বসে বিজাতীয় ভাষায় কলরব করতে লাগল। মক্ মক্ শব্দে ব্যাঙ ডাকছে এবং ঝিঝির ডাকে সমস্ত রাত্রি পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি মনে করলুম, এইখানেই পালকির মধ্যে বেঁকেচুরে হুমড়ে আজ রাতটা কাটাতে হবে, মুকুন্দ এবং নীলকণ্ঠ বোধ হয় কাল প্রভাতে এসে উপস্থিত হতেও পারে। মনে মনে গাইতে লাগলুম— ওগো, ওগো, যদি নিশিশেষে আসে হেসে হেসে মোর হাসি আর রবে কি ! এই জাগরণে-ক্ষীণ বদন মলিন আমারে হেরিয়া কবে কী ! যাই হোক-না কেন, যদি কয় তো উড়ে ভাষায় কবে, আমি কিছুই বুঝতে পারব না ; কিন্তু মুখে যে আমার হাসি থাকবে না সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক ক্ষণ এই ভাবে কেটে গেল। এমন সময় হুই-হাই হু ই-হাই শব্দে বরদার পালকি এসে উপস্থিত হল। বরদা নেীকে আসবার সম্ভাবনা না দেখে হুকুম দিলেন পালকি মাথায় করে নদী পার করতে হবে। শুনে বেহারারা অনেক ইতস্তত করতে লাগল এবং আমার মনেও দয়া এবং কিঞ্চিৎ দ্বিধা উপস্থিত হতে লাগল। যা হোক, অনেক বাক্বিতণ্ডার পর তার হরিনাম উচ্চারণ করতে করতে পালকি মাথায় করে নদীর মধ্যে নাবলে । বহু কষ্টে নদী পার হল। তখন রাত সাড়ে দশটা। আমি কোনোবকম গুটিমুটি মেরে শুয়ে পড়লুম। বেশ খানিকট নিদ্রাকর্ষণ ህሙፃ