পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বহুকাল হল ছেলেবেলায় বোটে করে পদ্মায় আসছিলুম, একদিন রাত্তির প্রায় দুটোর সময় ঘুম ভেঙে যেতেই বোটের জানলাট তুলে ধরে মুখ বাড়িয়ে দেখলুম নিস্তরঙ্গ নদীর উপরে ফুটফুটে জ্যোৎস্না হয়েছে, একটি ছোট্ট ডিঙিতে একজন ছোকরা একলা দাড় বেয়ে চলেছে, এমনি মিষ্টি গলায় গান ধরেছে— গান তার পূর্বে তেমন মিষ্টি কখনও শুনি নি। হঠাৎ মনে হল, আবার যদি জীবনটা ঠিক সেই দিন থেকে ফিরে পাই । আর-একবার পরীক্ষা করে দেখা যায় ; এবার তাকে আর শুষ্ক অপরিতৃপ্ত করে ফেলে রেখে দিই নে— কবির গান গলায় নিয়ে একটি ছিপছিপে ডিঙিতে জোয়ারের বেলায় পৃথিবীতে ভেসে পড়ি, গান গাই এবং বশ করি এবং দেখে আসি পৃথিবীতে কোথায় কী আছে ; আপনাকেও একবার জানান দিই, অন্তকেও একবার জানি ; জীবনে যৌবনে উচ্ছসিত হয়ে বাতাসের মতো একবার হু হু ক’রে বেড়িয়ে আসি, তার পরে ঘরে ফিরে এসে পরিপূর্ণ প্রফুল্ল বাৰ্ধক্যটা কবির মতো কাটাই। খুব যে একটা উচু আইডিয়াল তা নয়। জগতের হিত করা এর চেয়ে ঢের বেশি বড়ো আইডিয়াল হতে পারে, কিন্তু আমি সবসুদ্ধ যেরকম লোক অামার ওটা মনেও উদয় হয় না। উপবাস ক’রে, আকাশের দিকে তাকিয়ে অনিদ্র থেকে, সর্বদা মনে মনে বিতর্ক ক’রে, পৃথিবীকে এবং মনুষ্যহৃদয়কে কথায় কথায় বঞ্চিত ক’রে, স্বেচ্ছারচিত দুর্ভিক্ষে এই দুর্লভ জীবন ত্যাগ করতে চাই নে। পৃথিবী যে স্থষ্টিকর্তার একটা ফাকি এবং শয়তানের একটা ফাদ, তা না মনে ক’রে একে বিশ্বাস ক’রে ভালোবেসে, ভালোবাসা পেয়ে, মামুষের মতো বেঁচে এবং মানুষের মতো মরে গেলেই যথেষ্ট – দেবতার মতো হাওয়া হয়ে যাবার চেষ্টা করা অামার কাজ নয়। જે ૨