পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

19e কাল সন্ধ্যার সময় নদীর ধারে একবার পশ্চিম দিকের সোনার সূর্যাস্ত এবং একবার পুব দিকের রুপোর চন্দ্রোদয়ের দিকে ফিরে, গোফে তা দিতে দিতে পায়চারি করে বেড়াচ্ছিলুম। রুগ্ন ছেলের দিকে মা যেমন করে তাকায় প্রকৃতি সেইরকম সুগভীর স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধ বিষাদের সঙ্গে আমার মুখের দিকে চেয়ে ছিল, নদীর জল আকাশের মতো স্থির এবং আমাদের দুটি বাধা নেীকো জলচর পাখির মতো মুখের উপর পাখা কেঁপে স্থির ভাবে ঘুমিয়ে আছে। এমন সময় মৌলবি এসে আমাকে ভীতকণ্ঠে চুপি চুপি খবর দিলে, ‘কলকাতার ভজিয়া আয়ছে। এক মুহূর্তের মধ্যে কতরকম অসম্ভব আশঙ্কা যে মনে উদয় হল তা আর বলতে পারি নে। যা হোক, মনের চাঞ্চল্য দমন করে গম্ভীর স্থির ভাবে আমার রাজ-চৌকিতে এসে বসে ভজিয়াকে ডেকে পাঠালুম। ভজিয়া যখন ঘরে প্রবেশ করেই কাহুনির সুর ধরে আমার পা জড়িয়ে ধরলে তখনই বুঝলুম, দুর্ঘটনা যদি কারও হয়ে থাকে তো সে ভজিয়ার। তার পরে তার সেই বঁাকা বাংলার সঙ্গে নাকের সুর এবং চোখের জল মিশিয়ে বিস্তর অসংলগ্ন ঘটনা ব’লে যেতে লাগল। বহু কষ্টে তার যা সার সংগ্রহ করা গেল সেটি হচ্ছে এই, ভজিয়া এবং ভজিয়ার মায়ে প্রায়ই ঝগড়া বেধে থাকে— কিছুই আশ্চর্য নয়, কারণ, দুজনেই আমাদের পশ্চিম-আর্যাবর্তের বীরাঙ্গন, কেউ হৃদয়ের কোমলতার জন্যে প্রসিদ্ধ নয়— এর মধ্যে একদিন সন্ধ্যাবেলায় মায়ে ঝিয়ে মুখোমুখি থেকে হাতাহাতি বেধে গিয়েছিল ; স্নেহালাপ থেকে যে আলিঙ্গন তা নয়, ○○