পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বিশ্বভারতী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

פס\ শিলাইদহ সোমবার। ৩ কাতিক কোজাগর পূর্ণিমার দিন, নদীর ধারে ধারে আস্তে আস্তে বেড়াচ্ছিলুম আর মনের মধ্যে স্বগত কথোপকথন চলছিল ; ঠিক কথোপকথন’ বলা যায় না, বোধ হয় আমি একলাই বকে যাচ্ছিলুম আর আমার সেই কাল্পনিক সঙ্গীটি অগত্য চুপচাপ ক’রে শুনে যাচ্ছিল, নিজের হয়ে একটা জবাব দেওয়াও সে বেচারার জো ছিল না ; আমি তার মুখে যদি একটা নিতান্ত অসংগত কথাও বসিয়ে দিতুম তা হলেও তার কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু কী চমৎকার হয়েছিল, কী আর বলব। কতবার বলেছি, কিন্তু সম্পূর্ণ কিছুতেই বলা যায় না। নদীতে একটি রেখামাত্র ছিল না ; ও—ই সেই চরের পরপারে যেখানে পদ্মার জলের শেষ প্রান্ত দেখা যাচ্ছে সেখান থেকে আর এপর্যন্ত একটি প্রশস্ত জ্যোৎস্নারেখা ঝিকঝিক করছে ; একটি লোক নেই, একটি নৌকো নেই, ও পারের নতুন চরে একটি গাছ নেই, একটি তৃণ নেই– মনে হয়, যেন একটি উজাড় পৃথিবীর উপরে একটি উদাসীন চাদের উদয় হচ্ছে, জনশূন্ত জগতের মাঝখান দিয়ে একটি লক্ষ্যহীন নদী বহে চলেছে, মস্ত একটা পুরাতন গল্প এই পরিত্যক্ত পৃথিবীর উপরে শেষ হয়ে গেছে, আজ সেই-সব রাজা রাজকন্যা পাত্র মিত্র স্বর্ণপুরী কিছুই নেই, কেবল সেই গল্পের তেপান্তরের মাঠ এবং ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী মান জ্যোৎস্নায় ধুধু করছে। আমি যেন সেই মুমূর্ষ পৃথিবীর একটিমাত্র নাড়ীর মতো আস্তে আস্তে চলছিলুম। আর-সকলে ছিল আর-এক পারে, জীবনের পারে ; সেখানে এই বৃটিশ গবর্মেন্ট এবং উনবিংশ শতাব্দী এবং চী

  • ፭ ዓ