পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ২রা আষাঢ়, > Rおのぬ | কাল তাযাঢ়স্য প্রথম দিবসে বর্ষার নব রাজ্যাভিষেক বেশ রীতিমত আড়স্বরের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েগেছে । দিনেরবেলাটা খুব গরম হয়ে বিকেলের দিকে ভারি ঘনঘটা মেঘ করে এল । কাল ভাবলুম, বর্ষার প্রথম দিনটা, আজ বরঞ্চ ভেজাও ভাল তবু অন্ধকূপের মধ্যে দিনযাপন করবন । জীবনে ৯৩ সাল আর দ্বিতীয়বার আসবেন!—ভেবে দেখতে গেলে পরমায়ুর মধ্যে আষাঢ়ের প্রথম দিন আর ক’বারই বা আসবে—সবগুলো কুড়িয়ে যদি ত্ৰিশটা দিন হয় তাহ’লেও খুব দীর্ঘজীবন বলতে হবে । মেঘদূত লেখার পর থেকে আষাঢ়ের প্রথম দিনটা একটা বিশেষ চিল্লিত দিন হয়ে গেছে—নিদেন আমার পক্ষে । আমি প্রায়ই একএক সময়ে ভাবি, এই যে আমার জীবনে প্রত্যহ একটি একটি করে দিন আসচে, কোনটি স্বৰ্য্যোদয় স্থৰ্য্যাস্তে রাঙা, কোনটি ঘনঘোর মেঘে স্নিগ্ধশীতল, কোনটি পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় শাদা ফুলের মত প্রফুল্ল, এগুলি কি আমার কম সৌভাগ্য ! এবং এরা কি কম মূল্যবান ! হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে কালিদাস সেই যে আষাঢ়ের প্রথম দিনকে অভ্যর্থনা করেছিলেন—আমার জীবনেও প্রতি বৎসরে সেই আষাঢ়ের প্রথম দিন তার সমস্ত আকাশ-যোড়া ঐশ্বৰ্য্য নিয়ে উদয় হয়—সেই প্রাচীন উজ্জয়িনীর প্রাচীন কবির –সেই বহু-বহুকালের শত শত সুখদুঃখবিরহমিলনম য় নরনারীদের আষাঢ়স্য প্রথম দিবসঃ ! সেই অতি পুরাতন আষাঢ়ের প্রথম মহাদিন আমার জীবনে প্রতিবৎসর একটি একটি করে কমে যাচ্চে, অবশেষে এক সময় আসবে, যখন এই কালিদাসের দিন, এই মেঘদূতের দিন, এই ভারতবর্ষের বর্ষার চিরকালীন প্রথম দিন, আমার অদৃষ্ট্রে আর একটিও অবশিষ্ট থাকবে না। একথা ভাল করে ভাবৃলে পৃথিবীর দিকে আবার ভাল করে চেয়ে দেখতে ইচ্ছে করে ; ইচ্ছে করে জীবনের প্রত্যেক স্থৰ্য্যোদয়কে সজ্ঞানভাবে অভিবাদন করি এবং প্রত্যেক স্থৰ্য্যাস্তকে পরিচিত বন্ধুর মত বিদায় দিই । আমি যদি