পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর ২৮শে জুন, >レおさ l আজকের চিঠির মধ্যে একজায়গায় অ—র গানের একটুখানি উল্লেখ আছে। পড়ে মনটা কেমন হঠাৎ হুহু করে উঠল । জীবনের অনেকগুলি ছোট ছোট উপেক্ষিত সুখ, যারা সহরের গোলমালের মধ্যে কোন আমল পায় না, বিদেশে এলে তারা সময় বুঝে হৃদয়ের কাছে আপন আপন দরখাস্ত পাঠিয়ে দেয় । আমি গানবাজনা এত ভালবাসি এবং সহরেও এত কণ্ঠ এবং বাদ্য অাছে কিন্তু দিনের পর দিন চলে যায় এক দিনও কর্ণপাত করিনে। যদিও সব সময়ে বুঝতে পারিনে কিন্তু মনের ভিতরটা কি তৃষিত হয়ে থাকে না ? আজকের চিঠি পড়বামাত্রই অ—র মিষ্টিগান শোনবার জন্যে আমার এমনি ইচ্ছা করে উঠল যে তখনি বুঝতে পারলুম প্রকৃতির অনেকগুলি ক্ৰন্দনের মধ্যে এও একটা ক্ৰন্দন ভিতরে ভিতরে চাপা ছিল । বড় বড় তুরাশার মোহে জীবনের ছোট ছোট আনন্দগুলিকে উপেক্ষা করে আমাদের জীবনকে কি উপবাসী করেই রাথি ! যখন বিলেতে যাচ্ছিলুম আমার একটা কল্পনার সুখের ছবি এই ছিল যে কেউ একজন পিয়ানো বাজাচে, খোলা দরজা জানলার ভিতর দিয়ে আলো এবং বাতাস আসূচে, থানিকট সুদূর আকাশ ও গাছপালা দেখা যাচ্চে,—আমি একটা খোলা জানলার কাছে কোঁচের উপর পড়ে বাইরে চোখ রেখে শুনচি। এটা যে একটা দুৰ্লভ দুরাশা তা বলতে পারিনে কিন্তু তিনশো পয়ষটি দিনের মধ্যে ক'দিন অদৃষ্ট্রে এ মুখ পাওয়৷ যায় ! এই সমস্ত সুলভ আনন্দের অপরিতৃপ্তি জীবনের হিসাবে প্রতিদিন বেড়ে উঠচে —এর পরে এমন একটা দিন আসতেও পারে যখন মনে হবে যদি আবার জীবনটা সমস্তটা ফিরে পাই তাহলে আর কিছু অসাধ্য সাধন করতে চাইনে কেবল জীবনের এই প্রতিদিনের অযাচিত ছোট ছোট আনন্দগুলি প্রতিদিন উপভোগ করে নিই ।