পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদা, ২০শে অগষ্ট, ১৯৯২ । রোজ সকালে চোখ চেয়েই তামার বা দিকে জল এবং ডানদিকে নদীতীর স্বৰ্য্যকিরণে প্লাবিত দেখতে পাই । অনেক সময়ে ছবি দেখলে যে মনে হয় আহ। এইখানে যদি থাকতুম, ঠিক সেই ইচ্ছাট। এখানে পরিতৃপ্ত হয়—মনে হয়, একটি জাজ্জল্যমান ছবির মধ্যে তামি বাস করচি– বাস্তব জগতের কোনো কঠিনতাই এখানে যেন নেই । ছেলেবেলায় রবিনসনফ্লুসে:, পৌলবর্জিনি প্রভৃতি বই থেকে গাছপালা সমুদ্রের ছবি দেখে মন ভারি উদাসীন হয়ে যেত—এখানকার রৌদ্রে তামার সেই ছবিদেখার বাল্যস্মৃতি ভারি জেগে ওঠে—এর যে কি মানে ঠিক ধরতে পারিনে—এর সঙ্গে যে কি একটা আকাঙ্ক্ষা জড়িত আছে ঠিক বুঝতে পারিনে । এ যেন এই হৎ ধরণীর প্রতি একটা নাড়ীর টান । এক সময়ে যখন আনি এই পৃথিবীর সঙ্গে এক হয়ে ছিলুম, যখন আমার উপর সবুজ ঘাস উষ্ঠত, শরতের ভালো পড়ত, স্বৰ্য্যকিরণে আমার সুদূরবিস্তৃত শ্যামল অঙ্গের প্রত্যেক রোমকূপ থেকে যৌবনের সুগন্ধি উত্তাপ উত্থিত হতে থাকত—আমি কত দূর দূরান্তর কত দেশদেশান্তরের জলস্থলপৰ্ব্বত ব্যাপ্ত করে উজ্জ্বল আকাশের নীচে নিস্তব্ধভাবে শুয়ে পড়ে থাকতুম, তখন শরৎস্বর্য্যালোকে আমার বৃহৎ সৰ্ব্বাঙ্গে যে একটি আনন্দরস একটি জীবনীশক্তি অত্যন্ত অব্যক্ত অৰ্দ্ধচেতন এবং অত্যন্ত প্রকাণ্ডভাবে সঞ্চারিত হতে থাকত তাই যেন খানিকট মনে পড়ে । আমার এই যে মনের ভগব এ যেন এই প্রতিনিয়ত অস্কুরিত মুকুলিত পুলকিত স্থৰ্য্যসন্যথা আদিম পৃথিবীর ভাব । যেন আমার এই চেতনার প্রবাহ পৃথিবীর প্রত্যেক ঘাসে এবং গাছের শিকড়ে শিকড়ে শিরায় শিরায় ধীরে ধীরে প্রবাহিত হচ্চে—সমস্ত শস্যক্ষেত্র রোমাঞ্চিত হয়ে উঠচে এবং নারকেল গাছের প্রত্যেক পাতা জীবনের আবেগে থরথর করে কঁপিচে । এই পৃথিবীর উপর আমার যে একটি আন্তরিক আত্মীয়বৎসলতার ভাব আছে, ইচ্ছা করে সেটা ভালকরে প্রকাশ করতে—কিন্তু ওটা বোধ হয় অনেকেই ঠিকটি বুঝতে পারবে না, কি একটা কিন্তুত রকমের মনে করবে । |w ഞ്ചജത്ത ു ജ