পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর, ৩০শে আষাঢ়, ১৮৯৩ । আজকাল কবিতা লেখাটা আমার পক্ষে যেন একটা গোপননিষিদ্ধ সুখসম্ভোগের মত হয়ে পড়েচে—এদিকে আগামী মাসের সাধনার জন্যে একটি লাইন লেখা হয়নি, ওদিকে মধ্যে মধ্যে সম্পাদকের তাড়া আসচে, অনতিদূরে আশ্বিনকাৰ্ত্তিকের যুগল সাধনা রিক্ত হস্তে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ভৎসনা করচে, আর আমি আমার কবিতার অন্তঃপুরে পালিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্চি । রোজ মনে করি আজ একটা দিন বৈত নয়—এমনি করে কত দিন কেটে গেল । আমি বাস্তবিক ভেবে পাইনে কোনটা আমার আসল কাজ । এক এক সময় মনে হয় আমি ছোট ছোট গল্প অনেক লিখতে পারি এবং মন্দ লিখতে পারিনে—লেখবার সময় সুখ ও পাওয়া যায় । এক এক সময় মনে হয় আমার মাথায় এমন অনেকগুলো ভাবের উদয় হয় যা ঠিক কবিতায় ব্যক্ত করবার যোগ্য নয় সেগুলো ডায়ারি প্রভৃতি নানা আকারে প্রকাশ করে রেখে দেওয়া ভাল, বোধ হয় তাতে ফলও আছে আনন্দ ও আছে | এক এক সময় সামাজিক বিষয় নিয়ে আমাদের দেশের লোকের সঙ্গে ঝগড়া করা খুব দরকার, যখন আর কেউ করচেন তখন কাজেই আমাকে এই অপ্রিয় কৰ্ত্তব্যটা গ্রহণ করতে হয়—আবার এক এক সময় মনে হয় দুর হোকগে ছাই, পৃথিবী আপনার চরকায় আপনি তেল দেবে এখন,—মিল করে ছন্দ গেথে ছোট ছোট কবিতা লেখাট। আমার বেশ আসে, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে আপনার মনে আপনার কোণে সেই কাজই করা যাক । মদগৰ্ব্বিত যুবতী যেমন তার অনেকগুলি প্রণয়ীকে নিয়ে কোনটিকেই হাতছাড়া করতে চায়না, আমার কতকটা যেন সেই দশা হয়েচে । মিউজদের মধ্যে আমি কোনোটিকেই নিরাশ করতে চাইনে— কিন্তু তাতে কাজ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং হয়ত “দীঘ দৌড়ে কোনটিই পরিপূর্ণভাবে আমার স্বায়ত্ত হয়না । সাহিত্যবিভাগেও কৰ্ত্তব্যবুদ্ধির অধিকার আছে কিন্তু অন্য বিভাগের কর্তৰ্যৰুদ্ধির সঙ্গে তার একটু প্রভেদ আছে । কোনটাতে পৃথিবীর সব চেয়ে