পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( > t b ) উপকার হবে সাহিত্যকৰ্ত্তব্যজ্ঞানে সে কথা ভাববার দরকার নেই কিন্তু কোনটা আমি সব চেয়ে ভাল করতে পারি সেইটেই হচ্চে বিচাৰ্য্য । বোধ হয় জীবনের সকল বিভাগেই তাই । আমার বুদ্ধিতে যতটা আসে তাতেত বোধ হয় কবিতাতেই আমার সকলের চেয়ে বেশি অধিকার । কিন্তু আমার ক্ষুধানল বিশ্বরাজ্য ও মনোরাজ্যের সৰ্ব্বত্রই আপনার জলন্ত শিখা প্রসারিত করতে চায় । যখন গান তৈরি করতে আরম্ভ করি তখন মনে হয় এই কাজেই যদি লেগে থাক যায় তাহলেত মন্দ হয় না—আবার যখন একটা কিছু অভিনয়ে প্রবৃত্ত হওয়া যায় তখন এমনি নেশা চেপে যায় যে মনে হয় যে, চাই কি, এটাতেও একজন মানুষ আপনার জীবন নিয়োগ করতে পারে । আবার যখন “বাল্য-বিবাহ” কিম্বা “শিক্ষার হেরফের” নিয়ে পড়া যায় তখন মনে হয় এই হচ্চে জীবনের সৰ্ব্বোচ্চ কাজ ! আবার লজ্জার মাথা থেয়ে সত্যিকথ। যদি বলতে হয় তবে এটা স্বীকার করতে হয় যে, ঐ চিত্রবিদ্য বলে একটা বিদ্যা আছে তার প্রতিও আমি সৰ্ব্বদা হতাশ প্রণয়ের লুদ্ধ দৃষ্টিপাত করে থাকি –কিন্তু আর পাবার আশ নেই, সাধন করবার বয়স চলে গেছে । অন্যান্য বিদ্যার মত র্তাকেও সহজে পাবার যে নেই— র্তার একেবারে ধনুকভাঙা পণ—তুলি টেনে টেনে একেবারে হয়রান না হলে তার প্রসন্নত লাভ করা যায় না । একলা কবিতাটিকে নিয়ে থাকাই আমার পক্ষে সব চেয়ে সুবিধে—বোধ হয় যেন উনিই আমাকে সবচেয়ে বেশি ধরা দিয়েছেন—তামার ছেলেবেলাকার আমার বহুকালের অনুরাগিনী সঙ্গিনী । নীরব কবিসম্বন্ধে যে প্রশ্ন উঠেছে সে সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এই যে, সরব এবং নীরবের মধ্যে অনুভূতির পরিমাণ সমান থাকতে পারে কিন্তু আসল কবিত্ব জিনিষটি স্বতন্ত্র । কেবল ভাষার ক্ষমতা বলে নয়, গঠন করবার শক্তি । একটা অলক্ষিত অচেতন নৈপুণ্য বলে ভাবগুলি কবির হাতে বিচিত্র আকার ধারণ করে । সেই স্বজনক্ষমতাই কবিত্বের মূল । ভাষা, ভাব এবং অনুভব তার সরঞ্জামমাত্র। কারো বা ভাষা আছে কারো বা অনুভাব আছে, কারে বা ভাষা এবং অনুভাব দুই আছে, কিন্তু আর একটি ব্যক্তি আছে যার ভাষা অনুভব এবং স্বজনীশক্তি আছে, এই শেষোক্ত লোকটিকে কবি নাম দেওয়া যেতে পারে। প্রথমোক্ত তিনটি লোক নীরবও হতে পারেন সরবও হতে পারেন, কিন্তু তারা কবি নন। তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে ভাবুক বল্লেই ঠিক বিশেষণটা প্রয়োগ করা হয় । তারাও জগতে অত্যন্ত দুৰ্লভ এবং কবির তৃষিত চিত্ত সৰ্ব্বদাই তাদের জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে ।