পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলকাতা, ২১ শে আগষ্ট ১৮৯৩.। আজ কতকগুলো খবরের কাগজের কঁচিছাট টুকরো পাওয়া গেল । কোথায় প্যারিসের আটষ্ট সম্প্রদায়ের উদাম উন্মত্তত। আর কোথায় আমার কালিগ্রামের সরল চাষী প্রজাদের দুঃখদৈন্য নিবেদন । আমার কাছে এই সমস্ত দুঃখ পীড়িত অটল বিশ্বাসপরায়ণ অনুরক্ত প্রজাদের মুখে বড় একটি কোমল মাধুৰ্য্য আছে, বাস্তবিক এরা যেন আমার একটি দেশযোড় বৃহৎ পরিবারের লোক । এই সমস্ত নিঃসহায় নিরুপায় নিতান্ত নির্ভরপর সরল চাষাভুষোদের আপনার লোক মনে করতে একটা সুখ আছে । এরা অনেক দুঃখ অনেক ধৈর্য্যসহকারে সহ করেছে তবু এদের ভালবাসা কিছুতেই স্নান হয় না । আজ একজন এসে বলছিল, “সে বছর ভাল ধান হয়নি বলে চুচড়োয় বুড়ো বাপের কাছে এনছাপ নিতে গিয়েছিলুম তা সে বল্পে আমি তোদের কিছু ছেড়ে দিচ্চি তোরাও আমাকে কিছু খেতে দিস । তার কাছে দরবার করতে গিয়েছিলুম বলে সেই মনোবাদে এথানকার আমিন আমাকে ফেরেবি মকদ্দমা করে তিন মাস জেল খাটিয়েছিল । আমি তখন তোমার মাটিকে সেলাম করে ভিন্‌ এলাকায় গিয়েছিলুম।”—কিন্তু তবু তার এমনি ভক্তি যে সেই ভিন এলাকার জমিদার আমাদের কতক জমি চুরি করে ভোগ করছিল বলে সে এখানকার সেরেস্তায় জানিয়ে যায় সেই রাগে তার নতুন জমিদার তার ধানমৃদ্ধ জমি কেড়ে নিয়েছে । সে বলে, “ আমি যার মাটিতে বুড়োকাল পর্য্যন্ত মানুষ হয়েছি তার হিতের কথা তাকে আমি বলতে পাবনা !” এই বলে সে চোখ থেকে দুই এক ফোটা জল মুছে ফেল্পে । সে যে কেমন সহজে কোনরকম চাতুরী না করে যেন একটা খবর দিয়ে যাবার মত সমস্তটা বলে গেল তা দেখলে এই ব্যাপারটার যথার্থ গভীরতা বুঝতে পারা যায় । এদের উপর যে আমার কতখানি শ্রদ্ধা:হয়, আপনার চেয়ে যে এদের কতখানি ভাল মনে হয় তা এরা জানেন । কিন্তু তবু প্যারিসের সভ্যতা থেকে কত তফাৎ ! সে এর