পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসার, ১৯শে ফেব্রুয়ারী ১৮৯৪ । যে পারে বোট লাগিয়েচি এপারে খুব নির্জন । গ্রাম নেই বসতি নেই চম্ব মাঠ ধু ধূ করচে, নদীর ধারে ধারে খানিকটা করে শুকনো ঘাসের মত আছে সেই ঘাসগুলো ছিড়ে ছিড়ে গোটাকতক মোষ চরে বেড়াচ্চে । আর আমাদের দুটো হাতী আছে তারাও এপারে চরতে আসে। তাদের দেখতে বেশ মজা লাগে । একট পা উঠিয়ে ঘাসের গোড়ার স্থা চার বার একটু একটু ঠোকর মারে, তার পরে শুড় দিয়ে টান মারতেই বড় বড় ঘাসের চাপড়া একেবারে মাটিমৃদ্ধ উঠে আসে, সেই চাপড়াগুলো শুড়ে করে দুলিয়ে দুলিয়ে ঝাড়ে, তার মাটিগুলো ঝরে ঝরে পড়ে যায়, তার পরে মুখের মধ্যে পূরে দিয়ে খেয়ে ফেলে। আবার এক একসময় খেয়াল যায়, খানিকটা ধুলে গুড়ে করে নিয়ে ফু দিয়ে নিজের পেটে পিঠে সৰ্ব্বাঙ্গে হস করে ছড়িয়ে দেয়—এইরকম ত হাতির প্রসাধনক্রিয়া । বৃহৎ শরীর, বিপুল বল, শ্ৰীহীন আয়তন, অত্যন্ত নিরীহ—এই প্রকাণ্ড জন্তুটাকে দেখতে আমার বেশ লাগে । এর এই প্রকাগুত্ব এবং বিত্ৰীত্বর জন্যেই যেন এর প্রতি একটা কি বিশেষ স্নেহের উদ্রেক হয়—এর সর্বাঙ্গের অসৌষ্ঠব থেকে একে একটা মস্ত শিশুর মত মনে হয় । তাছাড়া জন্তুট বড় উদার প্রকৃতির—শিব ভোলানাথের মত—যখন ক্ষ্যাপে তখন খুব ক্ষ্যাপে যখন ঠাণ্ড হয়— তখন অগাধ শাস্তি । বড়ত্বর সঙ্গে সঙ্গে যে একরকম শ্ৰীহীনত্ব আছে—তাতে অন্তরকে বিমুখ করে না, বরঞ্চ আকর্ষণ করে আনে। আমার ঘরে যে বেঠোডেনের ছবি আছে অনেক সুন্দর মুখের সঙ্গে তুলনা করলে তাকে দর্শনযোগ্য মনে না হতে পারে, কিন্তু আমি যখন তার দিকে চাই সে আমাকে খুব টেনে নিয়ে যায়—ঐ উস্কোখুস্কে মাথাটার ভিতরে কতবড় একটা শব্দহীন শব্দজগৎ । এবং কি একটা বেদন ময় অশাস্ত ক্লিষ্ট প্রতিভা, রুদ্ধঝড়ের মত ঐ লোকটার ভিতরে ঘূর্ণ্যমান হত ।