পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পতিসর, ৩০শে মার্চ, ১৮৯৪ । এত অকারণ আশঙ্কা এবং কষ্ট মানুষের অদৃষ্টে থাকে ! ছোট বড় এত সহস্ৰ বিষয়ের উপর আমাদের মনের সুখশান্তি নির্ভর করে । অনেক দুঃখ আছে যা আমার নিজকৃত এবং যা সবিনয়ে সহিষ্ণুভাবে বহন করা কর্তব্য মনে হয়—কিন্তু চিঠি না পেয়ে যখন আশঙ্কা হয় যে বুঝি একটা কিছু বিপদ কিম্বা ব্যামো হয়েছে—তখন কষ্টুটাকে শান্ত করবার জন্যে হাতের কাছে কোনো ফিলজফিই পাওয়া যায় না । তখন বুদ্ধিটাও একেবারে কাজের বার হয়ে যায় । কাল সমস্তক্ষণ বেড়াতে বেড়াতে এমন সকল অসম্ভব এবং অসঙ্গত কল্পনা মনে উদয় হচ্ছিল এবং বুদ্ধি :তার কোনো প্রতিবাদ করছিল না যে আজ তা স্মরণ করে হাসিও পাচে লজ্জাও বোধ হচ্চে—অথচ স্থির নিশ্চয় জানি যে, আস্চে বারে, যেদিন এইরকম ঘটনা হবে ঠিক আবার এরই পুনরাবৃত্তি হবে । আমিও অনেকবার বলেছি বুদ্ধিটা মানুষের নিজস্ব জিনিষ নয়, ওটা এখনো আমাদের মনের মধ্যে ন্যাচরলাইজড হয়ে যায় নি । যখন মনে করি জীবনের পথ সুদীর্ঘ, দুঃখ কষ্টের কারণ অসংখ্য এবং অবশ্যম্ভাবী তখন এক এক সময় মনের বল রক্ষা করা প্রাণপণ কঠিন হয়ে পড়ে । অনেক সময় সন্ধ্যের সময় একলা বসে বসে টেবিলের বাতির আলোর দিকে দৃষ্টি নিবিষ্ট করে মনে করি জীবনটাকে বীরের মত অবিচলিত ভাবে নীরবে এবং বিনা অভিযোগে বহন করব—সেই কল্পনায় মনটা উপস্থিতমত অনেকখানি স্ফীত হয়ে ওঠে এবং আপনাকে হাতে হাতে একজন মস্ত বীরপুরুষ বলে ভ্রম হয়—তার পরে পথ চলতে পায়ে যেই কুশের কাটাটি ফোটে অমনি যখন লাফিয়ে উঠি তখন ভবিষ্যতের পক্ষে ভারি সন্দেহ উপস্থিত হয়, তখন আবার জীবনটাকে সুদীর্ঘ এবং আপনাকে সম্পূর্ণ অযোগ্য মনে হয়। কিন্তু সে যুক্তিটা বোধ হয় ঠিক নয়—বাস্তবিক, বোধ হয় কুশের র্কাটায় বেশি অস্থির করে । মনের ভিতরে একটি গোছালে৷ গিল্লিপন