পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ०११ ) দেখা যায়—সে দরকার বুঝে ব্যয় করে, সামান্য কারণে বলের অপব্যয় করতে চায়ন । সে যেন বড় বড় সঙ্কট এবং আত্মত্যাগের জন্যে আপনার সমস্ত বল কৃপণের মত সযত্নে সঞ্চয় করে রাখে । ছোট ছোট বেদনায় হাজার কান্নাকাটি করলেও তার রীতিমত সাহায্য পাওয়া যায় না । কিন্তু যেখানে দুঃখ গভীরতম সেখানে তার আলস্য নেই। এই জন্যে জীবনে একটা প্যারাডক্স প্রায়ই দেখা যায় যে, বড় দুঃখের চেয়ে ছোট দুঃখ যেন বেশি দুঃখকর । তার কারণ, বড় দুঃখে হৃদয়ের যেখানটা বিদীর্ণ হয়ে যায় সেইখান থেকেই একটা সাস্তুনার উৎস উঠতে থাকে, মনের সমস্ত দলবল সমস্ত ধৈৰ্য্যবীৰ্য্য এক হয়ে আপনার কাজ করতে থাকে,তখন দুঃখের মাহীত্ম্যের দ্বারাই তার সহ্য করবার শক্তি বেড়ে যায় । মানুষের হৃদয়ে একদিকে যেমন সুখলাভের ইচ্ছ। তেমনি আর একদিকে আত্মত্যাগের ইচ্ছাও আছে ; সুখের ইচ্ছ। যখন নিস্ফল হয় তখন আত্মত্যাগের ইচ্ছা বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সেই ইচ্ছার চরিতার্থত৷ সাধন করবার অবসর পেয়ে মনের ভিতরে একটা উদার উৎসাহসঞ্চার হয় । ছোট দুঃখের কাছে আমরা কাপুরুষ কিন্তু বড় দুঃখ আমাদের বীর করে তোলে, আমাদের যথার্থ মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে দেয় । তার ভিতরে একটা সুখ আছে । দুঃখের সুখ বলে একটা কথা অনেকদিন থেকে প্রচলিত আছে সেটা নিতান্ত বাকচাতুরী নয় এবং মুখের অসন্তোষ একটা আছে সেও সত্য। তার মানে বেশি শক্ত নয়। যখন আমরা নিছক সুখ ভোগ করতে থাকি তখন আমাদের মনের একাদ্ধ অকৃতাৰ্থ থাকে, তখন একটা কিছুর জন্যে দুঃখ ভোগ এবং ত্যাগ স্বীকার করতে ইচ্ছে করে, নইলে আপনাকে অযোগ্য বলে মনে হয়—এই কারণেই যে সুখের সঙ্গে দুঃখ মিশ্রিত সেই সুখই স্থায়ী এবং সুগভীর, তাতেই যথার্থ আমাদের সমস্ত প্রকৃতির চরিতার্থত৷ সাধন হয় । কিন্তু সুখ দুঃখের ফিলজফি ক্রমেই বেড়ে চলুতে লাগল । ২৩