পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ২৬শে জুন, ১৮৯৪ । আজ সকালে বিছানা থেকে উঠেই দেখি পাংশুবর্ণ মে েঘর ভারে আকাশ অন্ধকার এবং অবনত, বাদলার ভিজে হাওয়া দিচ্চে, টিপ্ টপ্‌ করে অবিশ্রাম বৃষ্টি পড়চে, নদীতে নেীকে বেশি নেই, ধান কাটবার জন্যে কাস্তে হাতে চা ষার মাথায় টোকা পরে গায়ে চট মুড়ি দিয়ে খেয়ানৌকোয় পার হচ্চে, মাঠে গরু চরচেন এবং ঘাটে স্নানার্থিনী জনপদবধূদের বাহুল্য নেই—অন্যদিন এতক্ষণ আমি তাদের উচ্চকণ্ঠের কলধ্বনি এপার থেকে শুনতে পেতুম, আজ সে সমস্ত কাক লী এবং পাখীর গান নীরব । যেদিক থেকে বৃষ্টির ছাট আসবার সম্ভাবনা সেদিককার জানলা এবং পর্দা ফেলে দিয়ে তন্ত্যদিককার জানলা খুলে আমি এতক্ষণ কাজের প্রত্যাশায় বসে ছিলুম। অবশেষে ক্রমেই আমার ধারণা হচ্চে আজ এ বাদলায় আমলার ঘরের বার হবেনা—হায়, আমিও শু্যাম নই, তারাও রাধিক নয়,–বর্ষাভিসারের এমন সুযোগ মাঠে মারা গেল । তাছাড়া বাশি যদি বাজাতুম এবং রাধিকার যদি কিছুমাত্র স্বরবোধ থাকৃত তাহলে বৃকভানুনন্দিনী বিশেষ “হর্যিতা” হতনা । যাই হোক, অবস্থাগতিকে যখন রাধিকাও আসচেননা আমলারা ও তদ্রুপ এবং আমার “Muse ”ও সম্প্রতি আমাকে পরিত্যাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছেন, তখন বসে বসে একখণ্ড চিঠি লেখা যেতে পারে । আসল হয়েছে কি, এতক্ষণ কোনো কাজ না থাকাতে নদীর দিকে চেয়ে গুন গুন স্বরে ভৈরবী টোড়ি রামকেলি মিশিয়ে একটা প্রভাতী রাগিণী সৃজনকরে আপন-মনে অলিপি করছিলুম, তাতে অকস্মাৎ মনের ভিতরে এমন একটা সুতীব্র অথচ স্বমধুর চাঞ্চল্য জেগে উঠল, এমন একটা অনিৰ্ব্বচনীয় ভাবের আবেগ উপস্থিত হল, এক মুহূর্তের মধ্যেই আমার এই বাস্তব জীবন এবং বাস্তব জগৎ আগাগোড়া এমন একটি মূৰ্ত্তি পরিবর্তন করে দেখা দিলে, অস্তিত্বের সমস্ত দুরূহ সমস্তার এমন একটা সঙ্গীতময় ভাবময় অথচ ভাষাহীন অর্থহীন অনির্দেশু উত্তর কানে এসে বাজতে লাগল, এবং