পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদা, ২৭শে জুন, ১৮৯৪ | কাল থেকে হঠাৎ আমার মাথায় একটা হাপি থটু এসেছে । আমি চিন্ত করে দেখলুম পৃথিবীর উপকার করব ইচ্ছা থাকলেও কৃতকাৰ্য্য হওয়া যায় না ; কিন্তু তার বদলে যেটা করতে পারি সেইটে করে ফেল্লে অনেক সময় আপনিই পৃথিবীর উপকার হয়, নিদেন যাহোক একটা কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় । আজকাল মনে হচ্চে, যদি আমি আর কিছুই না করে ছোট ছোট গল্প লিখতে বসি তাহলে কতকটা মনের সুখে থাকি এবং কৃতকার্য্য হতে পারলে হয়ত পাচজন পাঠকেরও মনের সুথের কারণ হওয়া যায় । গল্প লেখবার একটা সুখ এই, যাদের কথা লিখব তারা আমার দিন রাত্রির সমস্ত অবসর একেবারে ভরে রেখে দেবে, আমার একলা মনের সঙ্গী হবে, বর্ষার সময় আমার বদ্ধঘরের সঙ্কীর্ণতা দূর করবে, এবং রৌদ্রের সময় পদ্মাতীরের উজ্জল দৃষ্ঠের মধ্যে আমার চোখের পরে বেড়িয়ে বেড়াবে । আজ সকাল বেলায় তাই গিরিবালা নায়ী উজ্জলশ্যামবর্ণ একটি ছোট অভিমানী মেয়েকে আমার কল্পনগরাজ্যে অবতারণ করা গেছে । সবেমাত্ৰ পাচটি লাইন লিখেছি এবং সে পাচ লাইনে কেবল এই কথা বলেছি যে কাল বৃষ্টি হয়ে গেছে, আজ বর্ষণ অস্তে চঞ্চল মেঘ এবং চঞ্চল রৌদ্রের পরস্পর শিকার চলুচে, হেনকালে পূৰ্ব্বসঞ্চিত বিন্দুবিন্দু বারিশীকরবী তরুতলে গ্রামপথে উক্ত গিরিবালার আসা উচিত ছিল, তা না হয়ে আমার বোটে আমলাবর্গের সমাগম হল—তাতে করে সম্প্রতি গিরিবালাকে কিছুক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে হল । তা হোক্ তবু সে: মনের মধ্যে আছে । দিনযাপনের আজ আর এক রকম উপায় ভাব খুব স্পষ্ট করে মনে আনবার চেষ্টা করছিলুম। যখন পেনেটির বাগানে ছিলুম, যখন পৈতের নেড় মাথা নিয়ে প্রথমবার বোলপুরের বাগানে গিয়েছিলুম, যখন পশ্চিমের বারান্দার সবশেষের ঘরে আমাদের ইস্কুলঘর ছিল, এবং আমি একটা নীলকাগজের