পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহজাদপুরের পথ । জুলাই >レアお8 | 轉 সন্ধ্যাবেলায় পাবনা সহরের একটি খেয়াঘাটের কাছে বোট বাধা গেল । ওপার থেকে জনকতক লোক বায়াতবলার সঙ্গে গান গাচ্চে, একটা মিশ্রিত কলরব কানে এসে প্রবেশ করচে ; রাস্তা দিয়ে স্ত্রী পুরুষ যারা চলচে তাদের ব্যস্তভাব ; গাছপালার ভিতর দিয়ে দীপালোকিত কোটাবাড়ি দেখা যাচ্চে, খেয়াঘাটে নানাশ্রেণী লোকের ভিড় । আকাশে নিবিড় একটা একরঙা মেঘ, সন্ধ্যাও অন্ধকার হয়ে এসেছে ; ওপারে সারবাধা মহাজনী নৌকায় আলো জ্বলে উঠল, পূজাঘর থেকে সন্ধ্যারতির কাসর ঘণ্টা বাজতে লাগল,—বাতি নিবিয়ে দিয়ে বোটের জানলায় বসে আমার মনে ভারি একটা অপূৰ্ব্ব আবেগ উপস্থিত হল । অন্ধকারের আবরণের মধ্যে দিয়ে এই লোকালয়ের একটি যেন সজীব হৃৎস্পন্দন আমার বক্ষের উপর এসে আঘাত করতে লাগল। এই মেঘলা আকাশের নীচে, নিবিড় সন্ধ্যার মধ্যে, কত লোক, কত ইচ্ছা, কত কfজ, কত গৃহ, গৃহের মধ্যে জীবনের কত রহস্ত,—মানুষে মানুষে কাছাকাছি ঘেঁষাৰ্ঘেষি কত শত সহস্রপ্রকারের ঘাত প্রতিঘাত । বৃহৎ জনতার সমস্ত ভালমন্দ সমস্ত সুখদুঃখ এক হয়ে তরুলতাবেষ্টিত ক্ষুদ্র বর্যানদীর দুইতীর থেকে একটি সকরুণ সুন্দর সুগম্ভীর রাগিণীর মত আমার হৃদয়ে এসে প্রবেশ করতে লাগল । আমার “শৈশব সন্ধ্য৷” কবিতায় বোধ হয় কতকটা এই ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছিলুম। কথাটা সংক্ষেপে এই যে, মানুষ ক্ষুদ্র এবং ক্ষণস্থায়ী, অথচ ভালমন্দ এবং সুখদুঃখপরিপূর্ণ জীবনের প্রবাহ সেই পুরাতন সুগভীর কলস্বরে চিরদিন চলুচে ও চলবে—নগরের প্রান্তে সন্ধ্যার অন্ধকারে সেই চিরন্তন কলধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্চে । মানুষের দৈনিক জীবনের ক্ষণিকতা ও স্বাতন্ত্র্য এই অবিচ্ছিন্ন সুরের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্চে, সবসুদ্ধ খুব একটা বিস্তৃত আদিঅন্তশূন্য প্রশ্নোত্তরহীন মহাসমুদ্রের একতানশদের মত অস্তরের নিস্তব্ধতার মধ্যে গিয়ে প্রবেশ করচে । এক এক সময়ে কোথাকার কোন্‌ ছিদ্র দিয়ে জগতের বড় বড় প্রবাহ হৃদয়ের মধ্যে পথ পার—তার যে একটা ধ্বনি শোনা যায় সেটাকে কথায় তর্জমা করা অসাধ্য । അജ്ഞു ആ ജു