পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
(৮)

মার্কিন দেশীয় ভাষাতত্ত্ববিদ্ বলেন, পাণিনি যে ভাষার ব্যাকরণ, সে ভাষাই কোনকালে ছিল না—তিনি দেখেছেন পাণিনিতে এমন অনেক ধাতু প্রভৃতি পাওয়া যায় সমস্ত সংস্কৃত ভাষায় যা খুঁজলে মেলে না। এইরূপ নানা কারণে তিনি ঠিক করে রেখেচেন যে পাণিনি ব্যাকরণটি এমন একটি ঘোড়ার ডিম যা কোন ঘোড়ায় পাড়েনি। অনেক ভাষা আছে যার ব্যাকরণ এখনও তৈরি হয়নি কিন্তু কে জান্ত এমন ব্যাকরণ আছে যার ভাষা তৈরি হয় নি? এই ঘটনায় আমার মনে হয়েছে ভবিষ্যতে এমন একজন তত্ত্বজ্ঞের প্রাদুর্ভাব হতে পারে, যিনি নিঃসংশয়ে প্রমাণ করে দিতে পারবেন, যে, বাংলা সাহিত্য যে দেশের সাহিত্য সে দেশ মূলেই ছিল না—তখন বঙ্কিম বাবুর এত সাধের “সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং,” পুরাতত্ত্বের গবেষণার তোড়ে কোথায় ভেসে যাবে! পণ্ডিতেরা বল্বেন, বঙ্গসাহিত্য একটা কলেজের সাহিত্য, এটা দশের সাহিত্য নয় কিন্তু সে কলেজটা ছিল কোথায় এ বিষয়ে কিছুই মীমাংসা হবে না। আপনার সেই লেখাটির মধ্যে বাংলাদেশের সন্ধান পাওয়া যায়। ভারতবর্ষের পূর্ব্ববিভাগের জিওগ্রাফির প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। আপনার সেই লেখার মধ্যে অধিকাংশ স্থলে বাংলার ছেলেমেয়েরা কালেজি কথা কয় না ও কালেজি কাজ করে না, তারা প্রতিদিন গৃহের মধ্যে যে রকম কথা কয় ও যে রকম কাজ করে তাই দেখতে পাওয়া যায়। অন্য কারো অথবা ক্ষুদ্র আমার লেখায় সেইটি হবার যো নেই। কিন্তু আপনাকে আর অহঙ্কৃত করা হবে না, অতএব এখানেই সমালোচনায় ক্ষান্ত হলুম।