পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদ ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৪ । সাধনার জন্তে লিখতে লিখতে অন্যমনস্ক হয়ে যাই ; নৌকা চলে যায় মুখ তুলে দেখি, খেয়া পারাপার করে তাই দেখতে দেখতে সময় কাটে । ডাঙায় আমার বোটের খুব কাছে মন্থরগতি মোষ গুলো তাদের বড় বড় মুখ তৃণ গুন্মের মধ্যে পূরে দিয়ে সেগুলো নেড়েচেড়ে নিয়ে ফোস ফোস নিশ্বাস ফেলে কচ কচ শব্দ করতে করতে খেতে খেতে ল্যাজের ঝাপটায় পিঠের মাছি তাড়াতে তাড়াতে চলতে থাকে,—তার পর একটা অতি দুৰ্ব্বল উলঙ্গপ্রায় মনুষ্যশাবক এসে এই প্রশাস্তপ্রকৃতি প্রকাণ্ড জন্তুটার পিঠে পাচনির গুতো মেরে হঠ হঠ শব্দ করতে থাকে, জন্তুট তার বড় বড় চোখে এক একবার এই ক্ষীণ মানবকটির প্রতি কটাক্ষপাত করে’ পথের মধ্যে দুই এক গ্রাস ঘাসপাতা ছিড়ে নিয়ে অব্যাকুলচিত্তে মৃ মন্দগমনে খানিকটা দুর সরে যায়—আর ছেলেট মনে করে তার রাখালি কৰ্ত্তব্য সমাধা হল । আমি রাখালবালকদের মনস্তত্ত্বের এ রহস্যটা এ পর্য্যন্ত ভেদ করে উঠতে পারলুম না । গোরু কিম্ব মোষ যেখানে নিজে ইচ্ছাপূৰ্ব্বক তৃপ্তভাবে আহার করচে, অকারণে উৎপাত করে সেখান থেকে তাড়িয়ে আর খানিকটা দুরে নিয়ে গিয়ে কি উদেশ্ব সিদ্ধ হয় ঠিক জানিনে । পোৰমান। সবল প্রাণীদের উপর অনাবশ্বক উৎপীড়ন করে প্রভূগৰ্ব্ব অনুভব করা বোধ করি মানুষের স্বভাব । ঘন সরস তৃণগুলোর মধ্যে মোষের এই চরে খাওয়া আমার দেথতে বড় ভাল লাগে । কি কথা বলতে কি কথা উঠল । আমি বলতে যাচ্ছিলুম আজকাল অতি সামান্ত কারণেই আমার সাধনার তপোভঙ্গ হচ্চে। পূৰ্ব্বপত্রে বলেছি, কদিন ধরে গোটাকয়েক ভ্রমর আমার বোটের ভিতরে বাইরে অত্যন্ত চঞ্চলভাবে ব্যর্থগুঞ্জনে ও বৃথা অন্বেষণে ঘুরে বেড়াচ্চে—রোজই বেলা নটা দশটার সময় তাদের দেখা যায়,— তাড়াতাড়ি একবার আমার টেবিলের কাছে ডেস্কে র নীচে রঙীন শাসির উপরে আমার মাথার চারি ধারে ঘুরে আবার হ্রস করে বেরিয়ে চলে যায় । আমি অনায়াসে মনে করতে পারি লোকান্তর থেকে কোনো অতৃপ্ত প্রেতাত্মা রোজ সেই একই সময়ে ভ্রমর আকারে একবার করে আমাকে দেখেশুনে প্রদক্ষিণ করে যাচে । কিন্তু আমি তা মনে করিনে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওটা সত্যকার ভ্রমর, মধুপ, সংস্কৃতভাষায় যাকে কখনো কথনে বলে দ্বিরেফ । s abr