পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অক্টোবর >brb 9 আমি প্রায় এক মাস কাল দার্জিলিঙে কাটিয়ে এলুম। আপনার পত্র কলকাতায় আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল । আমি ফিরে এসে পেলুম। আপনাকে অনেক দিন থেকে লিখি লিখি করচি, কিন্তু দৈব বিপাকে হয়ে ওঠে নি। এবার আমার ততটা দোষ ছিল না । আমার কোমরে বাত হয়ে কিছুকাল শয্যাগত হয়ে পড়েছিলুম এখনো ভাল করে সারিনি । তবে এখন বিছানা থেকে উঠে বসেছি। কিন্তু বেশীক্ষণ চৌকিতে বসে থাকৃতে পারি নে। আমার কোমর ছাড়া পৃথিবীতে আর আর সমস্ত মঙ্গল । আমার স্ত্রী কন্যা দার্জিলিঙে, আমি কলকাতায় ঘরে বসে বিরহ ভোগ করচি—কিন্তু বিরহের চেয়ে কোমরের বাতটা বেশী গুরুতর বোধ হচ্চে । কবিরা যাই বলুন আমি এবার টের পেয়েছি বাতের কাছে বিরহ লাগে না । কোমরে বাত হলে চন্দনপঙ্ক লেপন করলে দ্বিগুণ বেড়ে ওঠে–চন্দ্রমাশালিনী পূর্ণিমা-যামিনী সাস্তুনার কারণ না হয়ে যন্ত্রণার কারণ হয়—আর স্নিগ্ধ সমীরণকে বিভীষিকা বলে জ্ঞান হয়—অথচ কালিদাস থেকে রাজকৃষ্ণ রায় পৰ্য্যন্ত কেউই বাতের উপর একছত্র কবিতা লেখেন নি, বোধ হয় কারু বাত হয় নি । আমি লিখব।—এই প্রসঙ্গে আমি আপনাকে একটা তত্বের মীমাংসা জিজ্ঞাসা করি— বিরহের কষ্টই বা কেন কবিতার বিষয় আর বাতের কষ্টই বা কেন কবিতার বিষয় নয় । কোমরটাকে যত সামান্ত বোধ হত এখন ত তত সামান্ত বোধ হয় না । হৃদয় ভেঙে গেলেও মানুষ মাথা তুলে খাড়া হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে—কিন্তু কোমর ভেঙে গেলেই মানুষ একেবারে কাৎ--তার আর উত্থানশক্তি থাকে না । তখন প্রেমের আহবান, স্বদেশের আহবান, সমস্ত পৃথিবীর আহবান এলেও সে কোমরে টাপিন তেল মালিষ করবে। যতদিন মানুষের কোমর না ভাঙে ততদিন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণশক্তি মানুষ ঠিক অনুভব কর্তে পারে না—আপনি কেতবে পড়েচেন কিন্তু তবুও জানেন না যে জননী বসুন্ধর ক্রমাগতই আমাদের মধ্যদেশ ধরে আকর্ষণ করচেন—বাত হলেই তবে