পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( २७० ) সেই রকম। কিন্তু নিজের ভিতরকার এই স্বজনব্যাপারের অখণ্ড ঐক্যস্থত্র যখন একবার অনুভব করা যায় তখন এই সর্জ্যমান অন স্ত বিশ্বচরাচরের সঙ্গে নিজের যোগ উপলব্ধি করি । বুঝতে পারি যেমন গ্ৰহ নক্ষত্র চন্দ্র স্বৰ্য্য জালুতে জলতে ঘুরতে ঘুরতে চিরকাল ধরে তৈরি হয়ে উঠচে আমার ভিতরেও তেমনি অনাদিকাল ধরে একটা স্বজন চলচে-আমার সুখদুঃখ বাসন বেদন তার মধ্যে আপনার আপনার স্থান গ্রহণ করচে—এর থেকে কি যে হয়ে উঠচে তা আমরা স্পষ্ট জানি নে কারণ আমরা একটি ধূলিকণাকেও জানিনে । কিন্তু নিজের প্রবহমান জীবনকে যখন নিজের বাহিরে নিখিলের সঙ্গে যুক্ত করে দেখি তখন জীবনের সমস্ত দুঃখগুলিকেও একটা বৃহৎ আনন্দস্তুত্রের মধ্যে গ্রথিত দেখতে পাই—আমি আছি, আমি চলচি, আমি হয়ে উঠচি এইটেকেই একটা বিরাট ব্যাপার বলে বুঝতে পারি। আমি আছি এবং আমার সঙ্গে সমস্তই আছে—আমাকে ছেড়ে কোথাও একটি অণুপরমাণুও থাকতে পারে না ; এই সুন্দর শরৎপ্রভাতের সঙ্গে এই জ্যোতিৰ্ম্ময় শূন্যের সঙ্গে আমার অন্তরাত্মার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার যোগ ; অনন্ত জগৎপ্রাণের সঙ্গে আমার এই যে চিরকালের নিগৃঢ় সম্বন্ধ সেই সম্বন্ধেরই প্রত্যক্ষভাষা এই সমস্ত বর্ণগন্ধগীত। চতুৰ্দ্দিকে এই ভাষার অবিশ্রাম বিকাশ আমার মনকে লক্ষ্যে অলক্ষ্যে ক্রমাগতই আন্দোলিত করচে, কথা বাৰ্ত্ত দিনরাত্রই চলচে। এই যে আমার অন্তরের সঙ্গে বাহিরের কথাবার্তা আনাগোন আদানপ্রদান—আমার যা কিছু পাওয়া সম্ভব তা কেবলমাত্র এর থেকেই পেতে পারি, তা অল্পই হোক আর বেশিই হোক ; শাস্ত্রথেকে যা পাই তা এইখানে একবার যাচাই করে না নিলে তা পাওয়াই হয় না । এই আমার অন্তরবাহিরের মিলনে যা নিরস্তর ঘটে উঠচে আমার ক্ষুদ্রতা তার মধ্যে বিকার ও বাধার সঞ্চার করে তাকে যেন আচ্ছন্ন না করে—আমার জীবন যেন এই পরিপূর্ণ মিলনের অনুকুল হয় নিখিলকে আমার মধ্যে যেন আমি বাধা ন দিই। কৃত্রিম জীবনের জ টল গ্রন্থিগুলি একে একে উন্মুক্ত হয়ে যাক, মুগ্ধ সংস্কারের এক একট বন্ধন কঠিন বেদনার দ্বারা একান্ত ছিন্ন হোক, নিবিড় নিভূত অস্তরতম সাস্তুনার মধ্যে অন্তঃকরণের চিরসঞ্চিত উত্তাপ একটি গভীর দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে মুক্তিলাভ করুক এবং জগতের সঙ্গে সরল সহজ সম্বন্ধের মধ্যে অনায়াসে দাড়িয়ে যেন বলুতে পারি আমি ধন্ত ! ഞ്ഞ ♔ ജമ്മ