পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( २१ ) আন্দাজ নেবে গেল । কিন্তু গাড়ির এঞ্জিন এ সকল বিষয়ে বড় একটা চিন্তা করে না, সে লোহার রাস্তার উপর দিয়ে এক রোগে চলে যায়, কোন লোক কোথায় কি ভাবে যাচ্চে, সে বিষয়ে তার খেয়াল করবার সময় নেই—সে কেবল গল গল করে জল খায় ছস হুস করে ধোয়। ছাড়ে, গ। গা করে চীৎকার করে, এবং গড় গড় করে চলে যায় । ংসারের গতির সঙ্গে এর সুন্দর তুলনা দেওয়৷ যেতে পারত কিন্তু সেটা এত পুরোণে এবং অনাবশ্যক যে কেবল একবার নির্দেশ করে ক্ষান্ত থাকা গেল । খাণ্ডালার কাছাকাছি এসে মেঘ এবং বৃষ্টি । সেই সব পাহাড়গুলোর উপর মেঘ জমে ঝাপস হয়ে গেছে--ঠিক যেন কে পাথর একে তার পরে রবার দিয়ে ঘসে দিয়েছে ;থানিক থানিক Outline দেখা যাচ্চে এবং খানিকট পেন্সিলের দাগ চারিদিকে ধেবড়ে গেছে । অবশেষে গাড়ির ঘণ্ট দিলে—দূর থেকে গাড়ির নিদ্রাহীন লাল চক্ষু দেখা গেল, ধরণী থর থর করে কাপতে লাগল, ষ্টেমনের কৰ্ত্তারা চট জুতো, ঘুীিiট দেওয়া চাপকন এবং টিকির উপরে তকমা দেওয়া গোল টুপি পরে নানা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল—বিপুল হশতল্যাণ্ঠণ চারিদিকে আলে। নিক্ষেপ করতে লাগল—খণনসামাবর্গ সচকিত হয়ে যে যার জিনিষপত্র আগলে দাড়াল, বে—ঘুমোতে লাগল। গাড়িতে উঠা গেল । * * * * বে –অকারণে খুং খ, আরম্ভ করলে—বেলা বাড়তে লাগল— যদিও রোদর নেই তবুও গরম বোধ হতে লাগল, কিন্তু সময় আর কাটে না । প্রত্যেক মিনিটকে যেন স্পর্শ করে ঠেলে ঠেলে এগোতে হচ্ছে । সে ভাগ ক্রমে খানিক দূর গিয়ে ঘোরতর বৃষ্টি আরম্ভ হল--চারদিক বন্ধ করে কাচের জানালার কাছে বসে মেঘবৃষ্টি দেখতে বেশ লাগল। এক জায়গায় একটা বর্ষার নদীর কাণ্ড যে দেখলুম সে আর কি বলুব—সে একেবারে ফুলে ফেঁপে ফেনিলে পাকিয়ে ঘুলিয়ে, ছুটে, মাথা খুড়ে, পাথর গুলোর উপরে পড়ে আছড়ে বিছড়ে তাদের ডিঙিয়ে, তাদের চারদিকে ঘুরপাক খেয়ে একটা কাণ্ড কৰ্ত্তে লাগল। এরকম উন্মত্ততা আর কোথাও দেখিনি । সোহাগপুরে বিকেলে এসে যখন খেলুম তখন বৃষ্টি থেমেছে—যখন গাড়ি ছাড়লে তখন দেখলুম স্থৰ্য্য অত্যন্ত রাঙা হয়ে মেঘের মধ্যে অস্ত যাচ্চে। আমি ভাবছিলুম, খাওয়া দাওয়া গল্পস্বল্প খেলাধুলো পড়াশুনোর মধ্যে আর সবার সময় কেবল অলক্ষিতভাবে কেটে যাচ্চে, সময় তাদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্চে —তার অস্তিত্বই তারা টের পাচ্ছে না— আর আমি সময়ের উপরে সাতার কেটে চলেছি, সমস্ত অগাধ সময়টা আমার