পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ৩০ ) ভাঙা লোহার উল্লুন, অত্যন্ত ময়ল একটা দস্তার চাদানি, ভাঙা সে জের কাচ ও ময়লা শামাদান, দুটাে অকৰ্ম্মণ্য ফিল্টার, meatsafe, একটা স্বপপ্লেটে খানিকটা পাতলা গুড়–ধুলে পড়ে পড়ে সেট গাঢ় হয়ে এসেছে, গোটা কতক ময়ল কালীবর্ণ ভিজে ঝাড়ন, কোণে বাসন ধোবার গাম্‌লা, গোফুর মিঞার একটা ময়লা কোর্তা এবং পুরোনে। মক্‌মলের Skull-cap, জলের দাগ তেলের দাগ দুধের দাগ কালে দাগ brown দাগ, শাদী দাগ এবং নানা মিশ্রিত দাগ বিশিষ্ট আয়নাহীন একটা জীর্ণ পোকাকাটা Dressing table ;তার পায়াকটা ভাঙা, আয়নাটা অন্যত্র দেয়ালে ঠেসান দেওয়া, তার থোপের মধ্যে ধুলো, খড়কে, ন্যাপকিন, পুরোণে তলা, ভাঙা গেলাসের তলা এবং সোডাওয়াটার বোতলের তার, কতকগুলে। খাটের খুরো ভাঙা—ব্যাপার দেখে আমার চক্ষু স্থির—ডাক্‌ লোকজন, নিয়ে আর নায়েব, ডেকে আন খাজাঞ্চি, যোগাড় কর কুলি, আন্‌ কাটা, আন জল, মই লাগা, দড়ি খোল, বঁাশ খোলু, তাকিয় লেপ কথা টেনে ফেলু, ভাঙা কাচের টুকরো গুলো খুটে খুটে তোল, দেয়ালের পেরেকগুলো একে একে উপড়ে ফেল—ওরে তোরা সব স্থা করে দাড়িয়ে রয়েছিস কেন, নে না একটা এক্ট করে জিনিষ নে ন—ওরে ভাঙলেরে সব ভাঙলে –ঝন ঝন ঝনাং—তিনটে সেজ ভেঙে চুরমার, খুটে খুটে তোলু–ভাঙা চুপড়িগুলো এবং ছেড়া চট্ট বহুদিনসঞ্চিত ধুলোসমেত নিজের হাতে টেনে ফেলে দিলুম—নিচে থেকে পাচ ছটা আর্সল সপরিবারে চতুৰ্দ্দিকে ছড়িয়ে পড়লেন তারা আমারই সঙ্গে একান্নবী হয়ে বাস করছিলেন, আমার গুড়, আমার পাউরুটি এবং আমারই নতুন জুতোর বাৰ্ণিশ তাদের উপজীবিকা ছিল । সাহেব লিখলেন “আমি এখনি যাচ্চি বড় বিপদে পড়েছি।” ওরে এলরে এল—চট্ পট্‌ কর । তার পরে—ঐ এসেছে সাহেব। তাড়াতাড়ি চুল দাড়ি সমস্ত ঝেড়ে ফেলে ভদ্র লোক হয়ে যেন কোন কাজ ছিলনা যেন সমস্ত দিন আরামে বসেছিলুম এই রকম ভাবে হলের ঘরে বসে রইলুম—সাহেবের সঙ্গে ঈষৎ হেসে হাত নাড়ানাড়ি করে অত্যন্ত নিশ্চিন্তভাবে গল্প কৰ্ত্তে লাগলুম—সাহেবের শোবার ঘরে কি হল এই চিন্তা ক্রমাগত মনের মধ্যে ঠেলে ঠেলে উঠতে লাগল। গিয়ে দেখলুম এক রকম দাড়িয়ে গেছে ; রাত্তিরটা ঘুমিয়ে কাটুতেও পারে যদি না সেই গৃহহীন আরস্থলোগুলো রাত্তিরে তার পায়ের তেলোয় সুড়সুড়ি দেয় ।