পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালিগ্রাম ৫ই মাঘ, >レ;) > বেশ কঁ,ড়েমি করবার মত বেলাটা । কেউ তাড়া দেবার লোক নেই, তা ছাড়া প্রজা এবং কাজের ভিড় এখনো চতুৰ্দ্দিকে ছেকে ধরেনি। সবসুদ্ধ খুব ঢিলে-ঢ়িলে একলা-একলা কি-একরকম মনে হচ্চে । যেন পৃথিবীতে অত্যাবশু্যক কাজ বলে একটা কিছুই নেই—এমন কি, নাইলেও চলে, না নাইলেও চলে, এবং ঠিক সময়মত খাওয়াটা কলকাতার লোকের মধ্যে প্রচলিত একটা বহুদিনের কুসংস্কার বলে মনে হয়। এখানকার চতুর্দিকের ভাবগতিকও সেই রকম । একটা ছোট্ট নদী আছে বটে কিন্তু তাতে কানাকড়ির স্রোত নেই, সে যেন আপন শৈবালদামের মধ্যে জড়ীভূত হয়ে অঙ্গবিস্তার করে দিয়ে পড়ে পড়ে ভাবচে যে যদি না চল্লেও চলে তবে আর চলবার দরকার কি ? জলের মাঝে মাঝে যে লম্ব ঘাস এবং জলজ উদ্ভিদ জন্মেছে, জেলেরা জাল ফেলতে না এলে সেগুলো সমস্ত দিনের মধ্যে একটু নাড়া পায় না। পাচটা ছটা বড় বড় নৌক সারি সারি বাধা আছে—তার মধ্যে একটার ছাতের উপর একজন মাঝি আপাদমস্তক কাপড় মুড়ে রোদরে নিদ্র দিচ্চে—আর একটার উপর একজন বসে বসে দড়ি পাকাচ্চে এবং রোদ পোহাচে, দাড়ের কাছে একজন আধ-বৃদ্ধ লোক অনাবৃতগাত্রে বসে অকারণে আমাদের বোটের দিকে চেয়ে আছে ; ডাঙার উপরে - নানান রকমের নানান লোক অত্যন্ত মৃদুমন্দ অলস চালে কেন যে আসচে, কেন যে যাচ্চে, কেন যে বুকের মধ্যে নিজের দুটাে হাটুকে আলিঙ্গন করে ধরে উবু হয়ে বসে আছে, কেন যে অবাক হয়ে বিশেষ কোন-কিছুর দিকে না তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে তার কোন অর্থ পাওয়া যায় না । কেবল গোটাকতক পাতি হাসের ওরি মধ্যে একটু ব্যস্ত ভাব দেখা যাচ্চে—তারা ভারি কলরব করচে, এবং ক্রমাগতই উৎসাহসহকারে জলের মধ্যে মাখ৷ ডুবোচ্চে,এবং তৎক্ষণাৎ মাথা তুলে নিয়ে সবলে ঝাড় দিচ্চে । ঠিক মনে হচ্চে যেন তার জলের নীচেকার নিগুঢ় রহস্ত আবিষ্কার করবার জন্যে