পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুরের অনতিদূরে, ১২ই মাঘ, >b>> এখনো পথে আছি । ভোর থেকে আরম্ভ করে সন্ধ্য সাতটা আটটা পৰ্য্যন্ত ক্রমাগতই ভেসে চলেছি। কেবলমাত্র গতির কেমন একটা আকর্ষণ আছে—দুধারের তটভূমি অবিশ্রাম চোখের উপর দিয়ে সরে সরে যাচ্চে—সমস্তদিন তাই চেয়ে আছি—কিছুতে তার থেকে চোখ ফেরাতে পারচিনে—পড়তে মন যার না, লিখতে মন যায় না, কোন কিছু কাজ নেই, কেবল চুপ করে চেয়ে বসে আছি । কেবল যে দৃশ্যের বৈচিত্র্যের জন্যে তা নয়—হয়ত দুধারে কিছুই নেই, কেবল তরুহীন তটের রেখামাত্র চলে গেছে—কিন্তু ক্রমাগতই চলুচে এই হচ্চে তার প্রধান আকর্ষণ । আমার নিজের কোন চেষ্টা নেই, পরিশ্রম নেই, অথচ বাইরের একটা অশ্রান্ত গতি মনটাকে বেশ মৃদু প্রশান্তভাবে ব্যাপৃত করে রাখে । মনের পরিশ্রমও নেই বিশ্রামও নেই এইরকমের একটা ভাব । চৌকিতে বসে বসে অলস অন্যমনস্কভাবে পা-দোলানে যেরকম এও সেইরকম, শরীরটা মোটের উপর বিশ্রাম করচে, অথচ শরীরের যে অতিরিক্ত উদ্যমটুকু কোনকালে স্থির থাকতে চায়না, তাকেও একটা একঘেয়ে রকম কাজ দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হয়েচে । আমাদের কলিগ্রামের সেই মুম্ষুর নাড়ির মত অতি ক্ষীণস্রোত নদী কাল কোনকালে ছাড়িয়ে এসেছি । সেই নদী থেকে ক্রমে একট। স্রোতস্বিনী নদীতে এসে পড়া গেল । সেটা বেয়ে ক্রমে এমন এক জায়গায় এসে পড়লুম যেখানে ডাঙায় জলে একাকার হয়ে গেছে । নদী এবং তীর উভয়ের আকারপ্রকারের ভেদ ক্রমশই ঘুচে গেছে—দুটি অল্পবয়সের ভাইবোনের মত । তীর এবং জল মাথায় মাথায় সমান—একটুও পাড় নেই । ক্রমে নদীর সেই ছিপছিপে আকারটুকু আর থাকেনা—নানাদিকে নানারকমে ভাগ হয়ে ক্রমে চতুৰ্দ্দিকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল । এই খানিকট সবুজ ঘাস এই খানিকট স্বচ্ছ জল । দেখে পৃথিবীর শিশুকাল মনে পড়ে—অসীম জলরাশির মধ্যে যখন স্থল সবে একটুখানি মাথা তুলেছে—