পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ । ফেব্রুয়ারি, ১৮৯১ । কাছারির পরপারের নির্জন চরে বোট লাগিয়ে বেশ আরাম বোধহচে । দিনটা এবং চারিদিকটা এমনি সুন্দর ঠেক্‌চে সে আর কি বলুব । অনেক দিন পরে আবার এই বড় পৃথিবীটার সঙ্গে যেন দেখাসাক্ষাৎ হল । সেও বল্লে “এই যে !” আমিও বলুম “এই যে ” তার পরে দুজনে পাশাপাশি বসে আছি আর কোন কথাবার্তা নেই । জল ছলছলু করচে এবং তার উপরে রোদর চিকচিক্‌ করচে—বালির চর ধূ ধু করচে, তার উপর ছোট ছোট বনঝাউ উঠেছে । জলের শব্দ, দুপুরবেলাকার নিস্তব্ধতার বী বর্ণ, এবং ঝাউঝোপ থেকে দুটাে একটা পাখীর চিকচিক্‌ শব্দ সবসুদ্ধ মিলে খুব একটা স্বপ্নবিষ্ট ভাব । খুব লিখে যেতে ইচ্ছে করচে–কিন্তু আর কিছু নিয়ে নয়, এই জলের শব্দ, এই রোদরের দিন, এই বালির চর। মনে হচ্চে রোজই ঘুরেফিরে এই কথাই লিখতে হবে ; কেননা, আমার এই একই নেশা, আমি বারবার এই এককথা নিয়েই বকি । বড় বড় নদী কাটিয়ে আমাদের বোটটা একটা ছোট নদীর মুথে প্রবেশ করচে । দুইধারে মেয়ের স্বান করচে, কাপড় কাচচে, এবং ভিজে কাপড়ে একমাথা ঘোমটা টেনে জলের কলসী নিয়ে ডানহাত ফুলিয়ে ঘরে চলেছে—ছেলেরা কাদা মেখে জল ছুড়ে মাতামাতি করচে—এবং একটা ছেলে বিন সুরে গান গাচ্চে— “একবার দাদা বলে ডাকুরে লক্ষ্মণ।” উচু পাড়ের উপর দিয়ে অদূরবত্তী গ্রামের খড়ের চাল এবং বাশবনের ডগা দেখা যাচ্ছে। আজ মেঘ কেটে গিয়ে রোদুর দেখা দিয়েচে । যে মেঘগুলো আকাশের প্রাস্তভাগে অবশিষ্ট আছে সেগুলো শাদা তুলোর রাশের মত দেখাচ্চে । বাতাস ঈষৎ গরম হয়ে বচে । ছোট নদীতে বড় বেশী নেীকে নেই ; ছটে একটা ছোট ডিঙি শুকনে গাছের ডাল এবং কাঠকুটো বোঝাই নিয়ে শ্রান্তভাবে ছপছপ্‌ দাড় ফেলে চলেচে—ডাঙায় বীশের উপর জেলেদের জাল শুকোচ্চে—পৃথিবীর সকালবেলাকার কাজকৰ্ম্ম খানিকক্ষণের জন্য বন্ধহয়ে আছে । மையக இ யை