পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এখন পাল তুলে যমুনার মধ্যে দিয়ে চলেছি । আমার বা ধারে মাঠে গরু চরচে—দক্ষিণ ধারে একেবারে কুল দেখা যাচ্চে না । নদীর তীব্র স্রোতে তীর থেকে ক্রমাগতই বুপ্রবুপ্ত করে মাটি খসে পড়চে । আশ্চৰ্য্য এই, এত বড় প্রকাণ্ড এই নদীটার মধ্যে আমাদের বোট ছাড়া আর দ্বিতীয় একটি নৌকা দেখা যাচ্চে না—চারিদিকে জলরাশি ক্রমাগতই ছল ছল থলু থলু শব্দ করছে—আর বাতাসের হু হু শব্দ শোনা যাচে । কাল সন্ধের সময় একটা চরের উপর বোট লাগিয়েছিলুম—নদীটি ছোট্ট— যমুনার একটি শাখ–একপারে বহুদুর পর্য্যন্ত শাদ বালি ধৃ ধূ করছে, জনমানবের সম্পর্ক নেই, আরএক পারে সবুজ শস্যক্ষেত্র এবং বহুদূরে একটি গ্রাম । আর কত বার বল্ব,—এই নদীর উপরে, মাঠের উপরে, গ্রামের উপরে সন্ধ্যাটা কি চমৎকার— কি প্রকাণ্ড, কি প্রশাস্ত, কি অগাধ ; সে কেবল স্তব্ধ হয়ে অনুভব করা যায় কিন্তু ব্যক্ত করতে গেলেই চঞ্চল হয়ে উঠতে হয়। ক্রমে যখন অন্ধকারে সমস্ত অস্পষ্ট হয়ে এল, কেবল জলের রেথ এবং তটের রেখায় একট। প্রভেদ দেখা যাচ্ছিল—এবং গাছপালা কুটার সমস্ত একাকার হয়ে একটা ঝাপ্‌স। জগৎ চোখের সামনে বিস্তৃত পড়ে ছিল—তখন ঠিক মনে হচ্ছিল এ সমস্ত যেন ছেলেবেলাকার রূপকথার অপরূপ জগৎ—যখন এই বৈজ্ঞানিক জগৎ সম্পূর্ণ গঠিত হয়ে ওঠেনি—অল্পদিন হল স্বষ্টি আরম্ভ হয়েছে—প্রদোষের অন্ধকারে এবং একটি ভীতি বিস্ময়পূর্ণ ছমৃ ছম নিস্তব্ধতায় সমস্ত বিশ্ব আচ্ছন্ন—যখন সাত সমুদ্র তেরোনদীর পারে মায়াপুরে পরমামুন্দরী রাজকন্য। চিরনিদ্রায় নিদ্রিত—যখন রাজপুত্র এবং পাত্তরের পুত্র তেপান্তরের মাঠে একটা অসম্ভব উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্চে— এ যেন তখনকার সেই অতি সুদূরবর্তী অৰ্দ্ধ-অচেতনায় মোহাচ্ছন্ন মায়ামিশ্রিত বিস্তৃত জগতের একটি নিস্তব্ধ নদীতীর এবং মনে করা যেতেও পারে আমি সেই রাজপুত্ৰ— একটা অসম্ভবের প্রত্যাশায় সন্ধ্যারাজ্যে বুরে বেড়াচ্ছি—এই ছোট নদীটি সেই তেরো