পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর । জলপথে ২০শে জুন, ১৮৯১ । কাল টেলিগ্রামের উত্তর পেয়ে আমাদের সমস্ত কাজ সেরে সন্ধ্যার সময় নেীকো ছেড়ে দিলুম। আকাশে মেঘ ছিল না—চাদ উঠেছিল—অল্প অল্প হাওয়া দিচ্ছিল— ঝুপ্রুপ দাড় ফেলে স্রোতের মুপে ছোট নদীটির মধ্যে ভেসে যাওয়া যাচ্ছিল । চারিদিক পরি-স্থান বলে মনে হচ্ছিল । সে সময়ে অন্যান্য সমস্ত নৌকো ডাঙায় কাছি বেঁধে পাল গুটিয়ে চন্দ্ৰণলোকে স্তব্ধ হয়ে নিদ্রা দিচ্ছিল । অবশেষে ছোট নদীট যেখানে যমুনার মধ্যে গিয়ে পড়েচে তারি কাছে একটা খুব নিরাপদ স্থানে গিয়ে নেীকে বাস্থলে । কিন্তু নিরাপদ স্থানের অনেক দোষ ; হাওয়া পাওয়া যায় না - বুপসির ভিতরে অদ্যান্ত নৌকোর কাছে–জঙ্গলের গন্ধ ইত্যাদি—আমি মাঝিকে বলুন—এপারে হাওয়া পাওয়া যাবে না, ওপারে চল । ওপারে উচু পাড় নাই ; জলে স্থলে সমান—এমন কি ধানের ক্ষেতের উপর এক হাটু জল উঠেচে । মাঝি সেইখানেই নেীকে নিয়ে বাধলে । তখন আমাদের পিছনদিকের আকাশে একটু বিদ্যুৎ চিক্‌মিক্‌ করতে আরম্ভ করেচে। আমি বিছানায় ঢুকে জানলার কাছে মুখ রেখে ক্ষেতের দিকে চেয়ে আছি এমন সময় রব উঠল—ঝড় আসচে। কাছি ফেল, নোঙর ফেল, এ কর, সে কর, করতে করতে এক প্রলয় ঝড় ছুটে এল । মাঝি থেকে থেকে বলতে লাগল—ভয় কোরোনা ভাই আল্লার নান কর আল্ল মালেক । থেকে থেকে সকলে আল্লা আল্লা করতে লাগল । আমাদের বোটের দুই পাশের পরদ। বাতাসে আছাড় থেয়ে খেয়ে শব্দ করতে লাগল, আমাদের বোটটা যেন একটা শিকলিবাধা পার্থীর মত পাখী ঝাপূটে ঝটুপটু ঝটুপট করছিল—ঝড়টা থেকে থেকে চীৰ্হি চীৰ্হি শব্দ করে একটা বিপৰ্য্যয় চিলের মত হঠাৎ এসে পড়ে বোটের ঝু’টি ধরে ছে মেরে ছিড়ে নিয়ে যেতে চায়-—বোটটা আমনি সশব্দে ধড়ফড় করে ওঠে । অনেকক্ষণ বাদে বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে ঝড় থেমে গেল । আমি হাওয়া খেতে চেয়েছিলুম—হাওয়াটা কিছু বেশী থাইয়ে দিলে—একেবারে আশাতিরিক্ত ।