পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর। জুন, ১৮৯১ । কাল রাত্রে ভারি একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখেছিলুম। সমস্ত কলকাত সহরটা যেন মহা একটা ভীষণ অথচ আশ্চৰ্য্য ভাবের দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে আছে—বাড়িঘর সমস্তই একটা অন্ধকার কালে কুয়াশার ভিতরথেকে দেখাযাচ্চে—এবং তার ভিতর তুমুল কি একটা কাণ্ড চল্‌চে। আমি একটা ভাড়াটে গাড়ি করে পার্কষ্ট্রীটের ভিতর দিয়ে যাচ্চি । যেতেযেতে দেখলুম সেন্ট জেভিয়ার কলেজটা দেখতেদেখতে হুহু করে বেড়ে উঠচে–সেই অন্ধকার কুয়াশার মধ্যে অসম্ভব উচু হয়ে উঠচে । তারপরে ক্রমে জানতে পারলুম একদল অদ্ভূত লোক এসেচে তার টাকা পেলে কি এক কৌশলে এইরকম অপূৰ্ব্ব ব্যাপার করতে পারে। যোড়ার্সকোর বাড়ি এসে দেখি সেথেনেও তারা এসেচে ; বদ দেখতে, কতকটা মোঙ্গোলিয়ান ধাচের চেহারা—সরু গোপ, গোট দশ বারে দাড়ি মুখের এদিকেওদিকে খোচার্থোচ রকম বেরিয়েচে । তারা মানুষকেও বড় করে দিতে পারে । তাই আমাদের দেউড়িতে আমাদের বাড়ির সব মেয়েরা লম্ব। হবার জন্যে উমেদার হয়েচেন—তারা এদের মাথায় কি একটা গুড়ে দিচ্চে আর এর হুস করে লম্ব হয়ে উঠচেন । আমি কেবলি বলুচি, কি আশ্চৰ্য্য, এ যেন ঠিক স্বপ্নের মত মনে হচ্চে । তার পরে, কে একজন প্রস্তাব করলে আমাদের বাড়িটা উচু করে দিতে। তার রাজি হয়ে বাড়ি কতকটা ভাঙতে আরম্ভ করলে, খানিকট৷ ভেঙেচুরে বলে, এইবার এত টাকা চাই নইলে বাড়িতে হাত দেবনা, কুঞ্জসরকার বল্পে সে কি হয় ; কাজ না হয়ে গেলে কি করে টাকা দেওয়া যায় । বহুতেই তার চটে উঠল—বাড়িটা সমস্তই একরকম বেঁকে চুরে বিক্র হয়ে গেল এবং মাঝেমাৰে দেখা গেল, আধখান। মানুষ দেয়ালের মধ্যে গাথা রয়েছে, আধখান বেরিয়ে । সমস্ত দেখেশুনে মনে হল এ সব সয়তানী কাও । বড়দাদাকে বলুম “বড়া, দেখচেন ব্যাপারটা। আমুন একবার উপাসনা করা যাক ।” দালানে গিয়ে খুব একাগ্রমনে উপাসন করা